#নাওয়াস ইব্ন সাম‘আন থেকে বর্ণিতঃ
Tuesday, December 15, 2020
দাজ্জাল - Dajjal
Thursday, October 1, 2020
হায়দ্রারাবাদী বিরিয়ানি
ইন্ডিয়ান হায়দ্রারাবাদী গ্রেভি,,
পালন শাক টা সিদ্ধু করে বেলেন্ডার করে আলাদা রাখতে হবে,
পদিনা পাতা,ধনিয়া পাতা,কাচামরিচ একসাথে বেলেন্ডার করে আলাদা রাখতে হবে,
( উপকরন ২)
এগুলা কুচি করে আলাদা রাখতে হবে,
(উপকরন ৩)
সমুদ্র বানিজ্য ভারতের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ
দেশের সমুদ্র বানিজ্য ভারতের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ
Tuesday, September 29, 2020
ঢাকার ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ এখন ঢাকেশ্বরী মন্দির
ঢাকার ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ এখন ঢাকেশ্বরী মন্দির!
জার্মানির হিটলারের প্রধান উপদেষ্টা জোসেফ গোয়েবলস এর একটি বহুল পরিচিত উক্তি হলো - “Repeat a lie often enough and it becomes the truth” অর্থাৎ একটি মিথ্যাকে বারংবার প্রচার করতে থাকলে মানুষ সেটাকে সত্যি হিসাবে মেনে নেয়।
ঠিক একইভাবে ভারতের মোদীর প্রধান সহযোগী অমিত শাহ একবার বিবৃতি দিয়েছিল যে – “ আমরা যে কোন মিথ্যাকে ভাইরাল করে দিতে পারি। “ অর্থাৎ তারা যে কোন মিথ্যাকে মিডিয়ার মাধ্যমে সত্য হিসাবে উপস্থাপন করতে পারে।
অবাক হওয়ার কিছু নেই, তারা ঠিক এইভাবেই হিন্দুদের বিশ্বাস করিয়েছে যে তাদের কল্পিত রাম বলে কেউ ছিল এবং তার জন্ম নাকি বাবরি মসজিদের স্থানে। এর ফলশ্রুতিতে তারা বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে গায়ের জোরে সেইস্থানে রাম মন্দির তৈরি করছে।
এইবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে!
শায়েস্তা খাঁ, মোঘল আমলের একজন বিখ্যাত সুবাদার বা প্রাদেশিক শাসক ছিলেন। তিনি বাংলা শাসন করেন প্রথমবার ১৬৬৪ থেকে ১৬৭৮ সাল এবং দ্বিতীয়বার ১৬৮০ থেকে ১৬৮৮ সাল।
তাঁর শাসনামলে ঢাকায় ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয় এবং সেই সময় বহু মসজিদ, ঈদগাহ নির্মাণ করেন। তার মধ্যে বর্তমান পুরনো ঢাকার অভ্যন্তরে পলাশী ব্যারাক এলাকায় বুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসসমূহের দক্ষিণে একটি ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন, যার পাশে একটি মসজিদও ছিলো বলে ইতিহাসে পাওয়া যায়। এটি অত্যন্ত বড় একটি ঈদগাহ হিসেবে বিখ্যাত ছিলো। ঐ স্থানটির তৎকালীন নাম ছিলো মুসলিমবাগ।
এই মুসলিমবাগ ঈদগাহটি তৎকালীন সময়ের ঐ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ ছিলো। ঈদগাহটির নাম ছিলো মুসলিমবাগ সুন্নী ঈদগাহ।
বিভিন্ন ইতিহাসে বর্ণিত, এখানে একটি বিশেষ কূপ ছিলো। যে কূপের পানি ছিলো অত্যন্ত সুমিষ্ট। যে পানি পান করলে অনেক কঠিন রোগও ভালো হয়ে যেতো। এই কুপটির সুনাম ভারত বর্ষসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিলো।
এই কূপের পানি খাওয়ার জন্য হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরাও এখানে আসতো। যেহেতু কূপটি মুসলমানদের ছিলো, তাই অনেক বিধর্মী এই কুপের পানি খাওয়ার জন্য বা নেয়ার জন্য আরজি করতো। মুসলমানদের মহানুভবতার কারণে সেই সুবিধা তারা শতভাগ লাভ করতো। এমনকি এই পানি খেয়ে উপকার পেয়ে অনেক বিধর্মী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার ইতিহাস পাওয়া যায়।
এছাড়াও বহু বিধর্মী এই ঐতিহাসিক কূপের পানি পান করার জন্য কলকাতা, দিল্লী, গুজরাট, কানপুর, মিজোরাম, মেঘালয় থেকে আসতো। তারা এই কূপের পানিকে তাদের বুঝ অনুযায়ী “ঈশ্বরের জল” মনে করতো।
শুধু তাই নয়, ইংরেজরা এই ভারতীয় উপমহাদেশে আসার পরে এই কূপের পানি খেয়ে উপকৃত হয়ে এটাকে তাদের বুঝ অনুযায়ী “প্রফেসিক ওয়াটার” বলে আখ্যায়িত করেছিলো। অথচ কূপটির মূল ইতিহাস ও মালিকানা মুসলমানদের সাথে সম্পৃক্ত।
সময়ের আবর্তনে এই কূপের পানির লোভ তথা ঈদগাহ ময়দানের সৌন্দর্যবোধ বিধর্মীদের আকাঙ্খার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ব্রিটিশ আমলে হিন্দুরা ব্রিটিশদের পা চেটে, অনেক কাকুতি মিনতি করে অতি কৌশলে স্থানটি দখলদারিত্ব নিয়ে নেয়।
পরবর্তীতে হিন্দুরা এই বরকতময় পানিকে তাদের মতো পবিত্র করার লক্ষ্যে এর ভেতর গো-চনা নিক্ষেপ করে ও নানা পূজা পার্বন করে। এর ফলে কিছুদিন পর পানি আশ্চর্যভাবে বন্ধ হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও সেই পানি আর তারা উত্তোলন করতে পারেনি।
এক পর্যায়ে ব্রিটিশদের সহযোগিতায় এই কূপ ও ঈদগাহের সমস্ত ইতিহাস তারা মুছে দেয় এবং মিথ্যা নতুন ইতিহাস তৈরি করে।
সেই মিথ্যা ইতিহাসে হিন্দুরা বলে, ১২শ শতাব্দীতে বল্লাল সেন এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত করে। কিন্তু ঐতিহাসিকরা আগেই প্রমাণ করেছে তৎকালীন যুগের মন্দিরের নির্মাণ শৈলীর সাথে এর কোনো মিল নেই।
এই স্থানটি পরবর্তীতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে রূপধারণ করে। হিন্দুরা সেখানে দুর্গা পূজার প্রচলন ঘটায়। বর্তমানে ঢাকেশ্বরী মন্দিরটি হচ্ছে দূর্গাপূজার সবচেয়ে বড় স্থান। যেহেতু দুর্গাপূজার বিশেষত্বেই এই মন্দিরের পরিচিতি সুতরাং এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা ব্রিটিশ আমলেই। কেননা, ব্রিটিশ আমলেই দুর্গাপূজার প্রচলন হয়। এর আগে দুর্গা পূজা বলতে হিন্দুদের মধ্যে কোনো উৎসব ছিলো না।
প্রকৃতপক্ষে, বর্তমানের ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জায়গাটি ছিলো শায়েস্তা খাঁর আমলের মুসলিমবাগ ঈদগাহ-এর জায়গা। কুচক্রী হিন্দু সম্প্রদায় ছলে বলে কৌশলে সেই স্থানটি ব্রিটিশদের কাছ থেকে তাদের নামে বরাদ্দ নিয়ে মুসলমানদের ঈদগাহ ধ্বংস করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছে।
C: Bahauddin Kabir
অনুগ্রহপূর্বক সবাই পোস্টটা শেয়ার করে অন্যদের জানার সুযোগ করে দিন প্লিজ
Wednesday, September 16, 2020
সৈয়দ মুজতবা আলী
দুইপক্ষেই কিছু মানুষের বিষেদগার সহ্য করা সৈয়দ মুজতবা আলীর নাগরিকত্ব একাধিকবার পরিবর্তন হয়েছে। কখনো ছিলেন ব্রিটিশ ভারতীয়, পরবর্তীতে পাকিস্তানি, পরবর্তীতে হলেন ভারতীয়, সবশেষ হলেন বাংলাদেশি। তার মৃত্যুর ৩ বছর আগে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। তার মত মানের একজন লেখক স্বাধীন বাংলাদেশ দেখে যেতে পেরেছেন এটা একটা স্বস্তির বিষয়। সেই সময়ের কিছু কম আলোচিত ঘটনা নিয়ে পোস্টটি, তাই একটু বড়। সময় থাকলেই পড়বেন।
পৈত্রিক সূত্রে দেশভাগের পর তিনি পূর্ব বাংলার নাগরিক হিসেবে পাকিস্তানি হন। তার জন্ম করিমগঞ্জে, যা অল্পের জন্য ৪৭ এ বাংলাদেশের অংশ হয়নি। কিন্তু উর্দু বিরোধিতা করে রাজনৈতিক তোপের কারনে টিকতে পারেননি। তার মত সৃজনশীল ও প্রগতিশীল লেখকের জীবন যে পাকিস্তানে নিরাপদ না তা বুঝতে পেরে আবার চলে যান যান ভারতে ( এক প্রকার জীবন রক্ষায়)।
বন-বার্লিন-কায়রো ঘুরে আসা যাযাবর মুজতবা আলীকে বগুড়ায় টেনে এনেছিল এখানকার মানুষের ভালোবাসা। ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে আজিজুল হক কলেজের বার্ষিক সাহিত্য সম্মিলনীর সভাপতি হিসেবে এ শহরে আসেন। তখন তাঁর বড় ভাই সৈয়দ মুর্তাজা আলী ছিলেন বগুড়ার ম্যাজিস্ট্রেট (সে সময় ম্যাজিস্ট্রেটই ছিলেন প্রশাসনিক প্রধান)। এখানে দুদিন তিনটি সভায় মজলিশি মেজাজে রসবোধ ও পাণ্ডিত্যের মিশেলে দুর্দান্ত বক্তব্য দিয়েছিলেন। সে সময় ছাত্ররা তাঁকে ঘিরে ধরেছিল। অনুরোধ করেছিল বগুড়ায় থেকে যাওয়ার জন্য। এই কলেজ থেকে তখন মাত্রই বিদায় নিয়েছিলেন ভাষাবিদ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনিই যাওয়ার সময় সুপারিশ করে যান, কলেজের পরবর্তী অধ্যক্ষ হিসেবে মুজতবা আলীর কথা তাঁরা ভাবতে পারে।
মুজতবা আলী তখনো সংসার শুরু করেননি। কোথাও থিতু হওয়ার মানুষই তিনি ছিলেন না। পায়ের তলায় সরষে ছিল তাঁর। পৃথিবীর পাঠশালায় ঘুরে ঘুরে জীবনের ধারাপাত পড়তে চেয়েছিলেন ভীষণ। কিন্তু শেষে মত বদলান। কলকাতা থেকে চলে আসেন আধশহুরে বগুড়ায়। বড় ভাই মুর্তাজার প্রতি অন্য রকম টান ছিল। জার্মানিতে পড়ার সময় এই বড় ভাই প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে পাঠিয়েছিলেন। সেই সময়ের হিসাবে টাকাটা অনেক বড়। ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা তো ছিলই, বগুড়ার মানুষের ভালোবাসাও ভুলতে পারেননি।
কিন্তু শুরু থেকেই বিপত্তি। কলেজের অধ্যক্ষ হওয়ার পর প্রথম যে নিয়মটা তিনি করেন, শিক্ষকদের নিয়ম অনুযায়ী কলেজে আসতে ও যেতে হবে। যে অধ্যাপকেরা খেয়াল–খুশিমতো যাওয়া আসা করতেন, শুরুতেই তাঁরা পড়লেন বিপদে। আরেকটা ঝামেলা বাধল। ছাত্রসংসদ নির্বাচনে হেরে গিয়েছিল মুসলিম লিগের অনুসারী ছাত্রসংগঠন। তারা অধ্যক্ষের ওপরে চাপ তৈরি করল নির্বাচন বাতিলের। না হলে মুজতবা আলী বিপদে পড়বেন বলেও শাসিয়ে গেল। কিছুতেই লাভ হচ্ছে না দেখে পরাজিত ছাত্রনেতারা ঢাকায় গিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দেনদরবার করল।
মুজতবা আলী আগে থেকেই তাঁর লেখার কারণে প্রতিক্রিয়াশীলদের চক্ষুশূল ছিলেন। এদের অনেকে বগুড়ায় তাঁকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগে নাখোশ হন। এর মধ্যে ১৯৪৮ সালের আগস্টে বিশদ আকারে প্রকাশিত হয় পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা নিয়ে সিলেটে দেওয়া তাঁর বক্তব্য। এবার মুজতবাকে কোণঠাসা করতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় আজিজুল হক কলেজের সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধকে। যেখানে মন্ত্রীদের কটাক্ষ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। সরকারি চাকরি করে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় মুজতবাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
মুজতবা সে সময় ছিলেন ভাইয়ের সরকারি বাসভবনে। কলেজ অধ্যক্ষের জন্য কোনো বাসভবনও ছিল না। তাঁর বড় ভাই মুর্জাতাকেও জড়ানো হয়। পরিস্থিতিকে সুবিধাবাদীরা নানাভাবে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে দেখে মুর্তাজা ঢাকায় এসে মুখ্য সচিব আজিদ আহমেদকে বলেন, ‘দেখুন, আমার ভাই ১৭ বছর আগে জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করেছে। বগুড়ার মতো ছোট শহরে চাকরির জন্য সে আর মুখিয়ে নেই।’ তাঁর ভাইয়ের যে মেধা ও প্রজ্ঞা, সে সময় খুব কম মানুষেরই তা ছিল। নবগঠিত একটা দেশ যে মুজতবা আলীর মেধা কাজে লাগাচ্ছে না, উল্টো ষড়যন্ত্র করছে, এ নিয়ে হতাশার শেষ ছিল না মুর্তাজা আলীর।
সরকার মুর্তাজা আলীর কথাও শোনেনি। উল্টো তাঁকেও একপদ নিচে নামিয়ে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট করে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিল চট্টগ্রামে। নিজের পরিবারকে এই বিপদ থেকে মুক্ত করতে মুজতবা আলী আবার ভারতে চলে যান। ১৯৫০ সালে যোগ দেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, অধ্যাপক হিসেবে। এ সময় ভারতের শিক্ষামন্ত্রী মওলানা আবুল কালাম আজাদ তাঁকে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব কালচারাল রিলেশনস বিভাগে কাজ করার জন্য দিল্লিতে ডেকে নেন। ভারতের নাগরিক হন তিনি ১৯৫০ সালে। পরবর্তীতে প্রায় দেড় যুগ সেখানে ভালোই কাটে সময়। ভারতের রেডিওতেও কাজ করেন। অল ইন্ডিয়া রেডিওর চাকরি চূড়ান্তভাবে ছেড়ে দেবার পর সৈয়দ মুজতবা আলী কলকাতায় ফিরে এলেন আবারও, ১৯৫৭ সালে। চাকরি নেই, বয়স বাড়ছে, শরীরও আগের তুলনায় দুর্বল। সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটবে তাই নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত না থাকলেও আশেপাশে ভরসা জোগাবার মতো মানুষ কম। জীবিকা নিয়ে অস্থির অবস্থার মধ্যেই মুজতবা আলী কলকাতার পাট চুকিয়ে চলে গেলেন শান্তিনিকেতনে। শান্তিনিকেতনে চলে আসার পরও মুজতবা আলী মানসিকভাবে খুব শান্তি পেয়েছিলেন বলে মনে হয় না। আর্থিক কষ্ট তাঁকে থিতু হতে দিচ্ছিল না। বেশি বেশি পরিমাণে লিখে যে অধিক রোজগার করবেন, সেটাও শারীরিক কারণে সম্ভব হচ্ছিল না।
১৯৬৪ সালে মুজতবা আলীর বিরুদ্ধে কলকাতার কিছু পত্র-পত্রিকাও ভিন্ন কারণে কুৎসা রটনা শুরু করেছিল। ওই বছর শারদীয় বেতার জগৎ পত্রিকায় বহু আগে দেওয়া তাঁর এক বেতার ভাষণ পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল, সেটি নিয়ে যুগান্তর পত্রিকার ‘বেতার-সমালোচনা’ বিভাগে এক লেখক যারপরনাই মিথ্যাচার করেন। মুজতবা আলীর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক আচরণের অভিযোগ আনা হয়। এমনও বলা হয়, তিনি নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে হিন্দুধর্মের ওপর আঘাত হেনেছেন ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষের সুযোগ নিয়ে! ওই লেখকের কুৎসা-রটনা ও মিথ্যাচারের বিপক্ষে কলম ধরে মুজতবা আলীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন পরিমল গোস্বামী। তিনি একটি দীর্ঘ পত্র-প্রবন্ধ লিখে মুজতবার বিরুদ্ধে করা অসার অভিযোগগুলোর সব কটিই খণ্ডন করেন।
পরিমল গোস্বামী ঘটনাটির প্রতিবাদ করেছেন জেনে মুজতবা তা পড়তে চেয়েছিলেন। তাঁকে লেখা একটি পত্রে(তারিখ: ২২ নভেম্বর ১৯৬৪) এই পাঠ-আকাঙ্ক্ষার পাশাপাশি নিজের নানান বিড়ম্বনা নিয়েও কিছু কথা বলেছিলেন: ‘আমি অনিদ্রায় কাতর এই গরমি কাল থেকে।…ইতিমধ্যে নিবেদন, আমি শুধু এইটুকুই জানতুম, কে যেন আমাকে যুগান্তরে এক হাত নিয়েছে।…আমি সেটা দেখতে চাইনে। কিন্তু তোমার লেখা আমি সর্বদাই সাগ্রহে সানন্দে পড়ি। বরহক বলছি। অতএব ভদ্র, তোমার উত্তরের কাটিংগুলো পাঠালে অত্যন্ত চরিতার্থ হব। মফস্বলে বিশেষ কাগজের বিশেষ সংখ্যা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তবু এই শনিবারের প্রতি শ্যেনদৃষ্টি রাখবো।…তবু ব্রাদার তুমিই পাঠাও।…ইতিমধ্যে ঢাকায় একটি কাগজে এডিটোরিয়ালরূপে সিরিয়াল বেরচ্ছে আমার বিরুদ্ধে–আমি হেঁদু হয়ে গিয়েছি। সে সব আর এখানে তুলছি না।…পুনরায় নিবেদন, এসব লড়াইয়ে তুমি কি জিতবে! আর আমিই বা যাই কোথায়? ওরা বলে আমি কাফের, এরা বলে আমি লেড়ে। ভালোই, রাইকুল শ্যামকুল দুই-ই গেল। নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।…’ পরে পরিমল গোস্বামীর লেখা জবাবিপত্রটি তাঁর হাতে পৌঁছেছিল, সেটি পড়ে অত্যন্ত প্রীত হয়ে মাসখানেক পর(৭ ডিসেম্বর ১৯৬৪) তিনি তাঁকে লেখেন: ‘গোঁসাই, তোমাকে মারবে। এদেশে গোডসের অভাব নেই। তবে প্রশ্ন, তোমাকে কি আর ‘মারটার’ হওয়ার ‘লাক্সারি’টা এনজয় করতে দেবে?…খাসা লিখেছ। আর শেষ কথাটাই আসল…’।
বোলপুরের ভাড়া বাড়ির ওপরতলায় পরে মুজতবা নিজের জন্য একটি কক্ষ তৈরি করিয়ে নিয়েছিলেন। সম্ভবত সেখানে তিনি স্থায়ীভাবে থাকার চিন্তাভাবনা করছিলেন। কিন্তু এমন সময় ১৯৬৫ সালে বাঁধল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। চারিদিকে রুদ্ধশ্বাস আবহাওয়া। এতে করে শান্তিনিকেতনে যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে ব্যস্ত ছিল, তাঁরা এবার এক বড় রকমের মওকা পেয়ে গেল। ‘মুজতবা আলী আসলে পাকিস্তানের চর’, ‘তাঁর পরিবার থাকে পাকিস্তানে, তাঁর স্ত্রী পাকিস্তান সরকারের চাকুরে, তাহলে তিনি এখানে কেন?’– এমন সব বাজে কথা জনে জনে ছড়ানোর কাজটি এবার তাঁরা করতে লাগলো। তাঁকে গৃহবন্দী করা হয়েছে, এমন গুজবও একটি পত্রিকায় সংবাদরূপে প্রকাশিত হয়! সে খবর পড়ে দিল্লি থেকে হুমায়ুন কবির ফোন করে সাগরময় ঘোষের কাছে এর সত্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন। পরে আসল খবর জেনে তিনি আশস্ত হন।
পরবর্তীতে তিনি বোলপুর চলে যান
বোলপুরের ভাড়া বাড়ির ওপরতলায় পরে মুজতবা নিজের জন্য একটি কক্ষ তৈরি করিয়ে নিয়েছিলেন। সম্ভবত সেখানে তিনি স্থায়ীভাবে থাকার চিন্তাভাবনা করছিলেন। কিন্তু এমন সময় ১৯৬৫ সালে বাঁধল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। চারিদিকে রুদ্ধশ্বাস আবহাওয়া। এতে করে শান্তিনিকেতনে যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে ব্যস্ত ছিল, তাঁরা এবার এক বড় রকমের মওকা পেয়ে গেল। ‘মুজতবা আলী আসলে পাকিস্তানের চর’, ‘তাঁর পরিবার থাকে পাকিস্তানে, তাঁর স্ত্রী পাকিস্তান সরকারের চাকুরে, তাহলে তিনি এখানে কেন?’– এমন সব বাজে কথা জনে জনে ছড়ানোর কাজটি এবার তাঁরা করতে লাগলো। তাঁকে গৃহবন্দী করা হয়েছে, এমন গুজবও একটি পত্রিকায় সংবাদরূপে প্রকাশিত হয়! সে খবর পড়ে দিল্লি থেকে হুমায়ুন কবির ফোন করে সাগরময় ঘোষের কাছে এর সত্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন। পরে আসল খবর জেনে তিনি আশস্ত হন।
কিন্তু অপপ্রচারকারীরা থেমে থাকেনি। তাঁদের রটানো খবর বিশ্বাস করে স্থানীয় পুলিশ একদিন মুজতবা আলীর বাড়িতে তল্লাশি চালায়। কিন্তু বেআইনি কিছু না পেয়ে পুলিশ বাহিনি অগ্রপশ্চাৎ না ভেবেই তাঁর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়। ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণই অমানবিক ও আইনের লঙ্ঘন। বিষয়টি স্বয়ং ভারতের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কানেও গিয়েছিল। শুনে তিনি অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে মুজতবা আলীকে পাসপোর্ট ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এই ঘটনায় মুজতবা আলী মনে প্রচণ্ড আঘাত পান ও অপমানিত বোধ করতে থাকেন। ফলে অতিরিক্ত মাত্রার ঘুমের ওষুধ ছাড়া তখন তাঁর আর ঘুম আসতো না। এতে করে শরীরও ক্রমে আরো খারাপ হতে থাকে। এ কারণে তাঁকে ১৯৬৫-৬৬ সময়কালে পর পর তিনবার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। দীর্ঘকাল চিকিৎসা নেবার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে বোলপুরের বাড়িতে তিনটি সিলিং ফ্যান, একটি প্যাডেস্টাল ফ্যান ও সোফাসেট রেখেই তিনি ১৯৬৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর কলকাতা চলে আসে।
ঝুকি থাকলেও পরবর্তী জীবন তিনি ভারতেই কাটান ৭১ পর্যন্ত। বাংলাদেশ স্বাধীনতা পাওয়ার বাংলাদেশে ফিরে আসেন ১৯৭২ সালে । বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে যান, দুঃখজনক দেশে ফিরত আসার ২ বছরের মাঝেই ১৯৭৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা মুজতবা আলীর মতো প্রগতিশীল লেখকদের জন্য সাংস্কৃতিক মুক্তি ছিলো এক প্রকার।
১৯৭৪ সালে মারা যান তিনি।
দেশভাগ জীবনে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলা সেই সময়ের মুসলিম সাহিত্যিকের আরেকজন হচ্ছেন ভারত - পাকিস্তানের সাদাত হোসাইন মান্টো। তার ব্যাপারেও পড়তে পারেন চাইলে। কমেন্টে তার ব্যাপারে ছোট করে লিখা হলো।
ছবিতে : তরুন বয়সে মুজতবা আলী ( দেশভাগের আগে)
Tuesday, September 15, 2020
হায়দরাবাদ গণহত্যা ও গণধর্ষণ ১৯৪৮
বিস্তারিত পড়ুনঃ
১. সুন্দরলাল কমিটির রিপোর্ট লিঙ্ক - https://www.scribd.com/
২. উইকিপিডিয়া লিঙ্কঃ https://en.wikipedia.org/
৩. Hyderabad 1948: India's hidden massacre - https://www.bbc.com/news/
( ছবিতে হায়দরাবাদের পতনের পর বল্লভ ভাই প্যাটেল ও হায়দরাবাদের নিজাম )
সুন্দরবনের ১০০০-১২০০ বছরের নিদর্শন
নতুন আবিষ্কার বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাস
বাংলাদেশ কি হায়দারাবাদের পথে?
বাংলাদেশ কি হায়দারাবাদের পথে?
তবে আমার আশংকার ইতিহাস বিলুপ্ত হয়নি। শীঘ্রই হায়দারাবাদের ইতিহাস হয়ত বাংলাদেশ হয়ে ফিরে আসতে যাচ্ছে। তাই হায়দারাবাদের ইতিহাস প্রত্যেকটি বাংলাদেশীর জানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ হায়দারাবাদের করুণ ইতিহাস বাংলাদেশের মানুষকে অনেককিছু বলতে চায়, জানাতে চায়, সতর্ক করতে চায়!
কী ছিল হায়দারাবাদ?
পৃথিবীর বিস্ময়, জ্যোতির পাহাড়, ‘কোহিনুর’ হীরার জন্মদাত্রী, হীরক-আকর সমৃদ্ধ গোলকুন্ডার কন্যা হায়দারাবাদ। গোদাবরী, কৃষ্ণা, তুঙ্গভদ্রা, পূর্ণা, ভীমা, পেনগঙ্গা, ওয়ার্ধা, মুসী, প্রানহিটা নদী বিধৌত সুজলা সুফলা দেশ হায়দারাবাদ।
ইতিহাসখ্যাত অজন্তা-ইলোরা গুহা। আওরঙ্গাবাদ, ওসমানাবাদ শহর। গোলকুন্ডা, গুলবার্গ, ওয়ারাংগাল, রাইচুর, পারেন্দা, নলদূর্গ প্রভৃতি ঐতিহাসিক দূর্গের ঐতিহ্যমণ্ডিত হায়দারাবাদ । হীরক, স্বর্ণ, লৌহ, কয়লা, অভ্র প্রভৃতি মূল্যবান আকরিক সম্পদে সমৃদ্ধ হায়দারাবাদ। মক্কা মসজিদ, চার-মিনার সৌধ মসজিদ সহ পাঁচশ বছরের মুসলিম শাসনের আভিজাত্য সম্বলিত হায়দারাবাদ, আজ নিঝুম গোরস্থানে নিভে যাওয়া এক প্রদীপের মত, নাম নিশানাহীন, ভারত শাসিত তেলেঙ্গানা অঙ্গ-রাজ্য মাত্র!
বাংলাদেশের আয়তনের তুলনায় বড় (৮২,৬৯৬ বর্গ মাইল) বিস্তৃত দেশীয় রাজ্যগুলির মধ্যে সুবিশাল রাজ্য ছিল হায়দারাবাদ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনেও একধরণের স্বাধীন রাজ্য হিসেবে বিবেচিত হত। হায়দারাবাদের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ছিল। নিজস্ব মুদ্রা ছিল, সেনাবাহিনী ছিল, আইন আদালত ছিল, বিচার ব্যবস্থা ছিল, হাইকোর্ট ছিল, শুল্ক বিভাগ ছিল। নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, ভাষা ছিল। নিজস্ব স্বাধীন পতাকা ছিল, জাতীয় সঙ্গীত ছিল , দেশে দেশে নিজস্ব রাষ্ট্রদূত ছিল, এমনকি জাতিসংঘে নিজস্ব প্রতিনিধি ও ছিল। অর্থাৎ একটা স্বাধীন দেশের যা যা পদমর্যাদা থাকে, সবই হায়দারাবাদের ছিল। তাছাড়াও ১৯৩৫ সালের গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া এ্যাক্টে হায়দারাবাদকে স্বাধীন মর্যাদা দান করে বলা হয়েছিল, দেশীয় রাজ্যগুলির পদমর্যাদা এবং স্বাভাবিক কার্যাবলি, স্বাধীন ভারতের কাছে রাজ্যগুলির অনুমতি ব্যতিরেকে হস্তান্তর করা যাবেনা। তারপরও নাজীহিন্দুত্ববাদী ভারত আন্তর্জাতিক সকল আইন-কানুন নর্ম উপেক্ষা করে হায়দারাবাদে সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে দেশটি দখল করে নেয়।
ভারত কিভাবে হায়দারাবাদ দখল করলো?
নাজী হিন্দুত্ববাদী ভারতের আশপাশের রাজ্যগুলি দখল করার ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে তারা কিছু এজেন্টের মাধ্যমে প্রথমে দেশের অভ্যন্তরে বিরোধ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তারপর সেই সুযোগে দুর্বল দেশটির উপর বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দেশটি দখল করে নেয়। ৪৭সালের পার্টিশনের সময় যেমনটা আমরা দেখেছি, ত্রিবাঙ্কুরে, যোধপুরে, ভূপালে, জুনাগড়ে এবং হায়দারাবাদে। পরে সিকিমে।
ফিরে আসি হায়দারাবাদের কথায়
মুসলিম শাসিত হায়দারাবাদের জন্মলগ্ন থেকে দেশটির জনগণ কোনদিন সাম্প্রদায়িকতা কাকে বলে জানতোনা। সেই হায়দারাবাদে হিন্দু মহাসভা, আর্য সমাজ প্রভৃতির শাখা সৃষ্টি করে ভারত সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করলো।
বংশ পরম্পরায় প্রচলিত জাতীয় সংগীতের বিরুদ্ধে, গান্ধীজির নির্দেশে, তার শিষ্য রামানন্দ তীর্থ, নরসীমা রাও(ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী), ওয়াই বি চ্যাবন প্রমূখ, ‘বন্দেমাতরম’ কে জাতীয় সঙ্গীত করার আন্দোলন শুরু করে দিল।
মোগল আমল থেকে প্রচলিত হায়দারাবাদের নিজস্ব জাতীয় ভাষা, উর্দুভাষার পরিবর্তে হিন্দুস্তানী ভাষা প্রচলন করার দাবীতে ভাষা আন্দোলন শুরু করা হল।
ষ্টেট কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রামানন্দ তীর্থ’র মাধ্যমে বর্ডার এলাকা গুলোতে অস্ত্রধারী ক্যাডারদের জড় করে সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে, হায়দারাবাদের সীমান্ত অঞ্চলকে ফ্রিজোন ঘোষণা করলো ।
তারপর, শ্রেণী সংগ্রামী নামধারী কমিউনিস্টদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ সৃষ্টি করে হায়দারাবাদ দখলের প্রস্তুতিমূলক ড্রেস রিহার্স্যাল শেষ করলো! এবার দেশটি দখলের ফাইনাল মঞ্চায়নের পালা।
প্রথম ভাগে, বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিদের মাধ্যমে হায়দারাবাদকে ভিতর থেকে অস্থিতিশীল এবং জনগণকে বিভক্ত ও দুর্বল করে ফেলা হল, যাতে করে সেনাবাহিনীর সামান্য আঘাতেই হায়দারাবাদের পতন ঘটে।
আগ্রাসী ভারতের হায়দারাবাদ দখলের নক্সা বা ব্লু-প্রিন্ট পর্যালোচনা করলে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক রাজনীতির বেশ কিছু সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যাবে।
১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট স্বাধীন পাকিস্তানের ঘোষণা দেয়া হল। এবং ঐদিনে হায়দারাবাদও স্বাধীনতা ঘোষণা করলো। বর্ণবাদী হিন্দু নেতারা হায়দারাবাদের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারলনা! জওহরলাল নেহেরু হুঙ্কার দিয়ে বললেন ‘যদি এবং যখন প্রয়োজন মনে করবো, হায়দারাবাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু করা হবে। নেহেরুর এই দাম্ভিক উক্তি সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে ১৯৪৮ সালের ৩০ জুলাই তৎকালীন বৃটিশ বিরোধীদলীয় নেতা উইনস্টন চার্চিল কমন্স সভায় বলেছিলেন, “Nehru’s threat to the language, which Hitler might have used the devouring of Austria”( B K Bawa.The last Nizam)
দেশের ভিতরে নানান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পর ভারত চূড়ান্তভাবে হায়দারাবাদ দখলের পরিকল্পনা করলো। লেঃ জেঃ ই এম গোর্দাদ, জিএসও সাউদার্ন কমান্ড-এর উপর আক্রমণের প্ল্যান তৈরির ভার দেয়া হল। তাকে দেয়া হল —
১) একটি আর্মার্ড বিগ্রেড
২) ১৭ ডোগরা রেজিমেন্টের থার্ড ক্যাভালরি ও নবম ব্যাটালিয়ন
৩) নবম-ইনফ্যান্ট্রি ব্যটালিয়নসহ আরও ৩ টি ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন
৪) ৪টি অতিরিক্ত ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন
৫) ৩ রেজিমেন্ট ফিল্ড আর্টিলারি ও একটি এ্যান্টি ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট
৬) ১৮ ক্যাভালরি সার্ভিস মেইনটেইনেন্স ট্রুপস
৭) বিপুল সংখ্যক ফোরম্যান ও ষ্টুয়ার্ট ট্যাংক
৮) রয়্যাল ইন্ডিয়ান বিমান বাহিনী
অপর পক্ষে হায়দাবাদের ছিল — মাত্র,
১) ১২ হাজার সেনা
২) ৮ টি ২৫ পাউন্ডের কামান
৩) ৩ রেজিমেন্ট সেনা যানবাহন
৪) ১০ হাজার পুলিশ ও কাস্টম বাহিনী, ও কিছু জানবাজ বেসরকারি রাজাকার বাহিনী
১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের প্রাণপ্রিয় নেতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ ইন্তেকাল করলেন, সমস্ত মুসলমান জাতি তখন শোকে মূহ্যমান, ঠিক সেই সময়টিকে হায়দারাবাদ আক্রমণের উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নিলেন ভারতীয় খলনায়করা।
১৯৪৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারতীয় বাহিনী, মেঃ জেঃ জে এন চৌধুরির নেতৃত্বে হায়দারাবাদ অভিমুখে ত্রিমূখী অভিযান শুরু করলো। অভিযানের নাম দেয়া হল ‘অপারেশন পোলো’। ১৯৪৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মাত্র ৫ দিনের যুদ্ধে, হায়দারাবাদ বাহিনীর সেনাপতি মেজর জেনারেল আল ইদরুস বেইমানী করে ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এভাবেই চিরতরে নিভে যায় স্বাধীন হায়দারাবাদের স্বাধীনতার প্রদীপ! আজ হায়দারাবাদ নামটির অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে হিন্দুত্ববাদীরা নাম দিয়েছ তেলেঙ্গানা। শকুনের দল স্বাধীন দেশটিকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু প্রভৃতি রাজ্যের মধ্যে বিলিবণ্টন করে দিয়েছে। হায়দারাবাদের নামনিশানা পর্যন্ত পৃথিবীর মানচিত্রে আর অবশিষ্ট নেই!
ভারতীয় সাংবাদিক ভি টি রাজশেখর এক প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘মুসলমানদের বড় অক্ষমতা তারা নাজীহিন্দুদের মনের কথা বুঝতে সক্ষম হয়নি’। কথাটির সত্যতা বাংলাদেশের মুসলমানরা আজ হাড়েহাড়ে উপলব্ধি করতে পারছে! প্রাণের কানুকে ভালবেসে আজ তারা গভীর খাদের শেষ কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। সামান্য আঘাতেই হায়দারাবাদের মত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে!
ভারত কোনদিনই বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র ছিলনা। তার বহু প্রমাণ দেয়া যায়। স্থানাভাবে তা দেয়া সম্ভব নয়। স্মৃতি তাজা করার জন্য মাত্র দু একটা তুলে ধরতে চাই। ১৯৪৭ থকে ৫০ সাল পর্যন্ত জওহরলাল নেহেরু ৩ বার পুলিশ এ্যাকশন করে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান (আজকের বাংলাদেশ) দখল করার পরিকল্পনা করে। এ তথ্য ফাঁস করেছেন মিঃ নিরোদ সি চৌধুরী তাঁর এক প্রবন্ধে। জয়প্রকাশ নারায়ণ সৈন্য ঢুকিয়ে পূর্ব পাকিস্তান গ্রাস করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। শুধু কি নেহেরু- জয়প্রকাশ! প্যাটেল বলেছিলেন ‘পূর্ববাংলাকে ৬মাসের মধ্যেই আমাদের পা’য়ে এসে পড়তে হবে। ‘৪৭ থেকে বর্তমান মোদির জমানা পর্যন্ত ভারত প্রতিটি পদক্ষেপে নিজেকে পররাজ্য লোভী, চরম হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক দেশ বলে প্রমাণ রেখেছে! তারপরও ৯০% মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের নাকি তার ‘নাড়ীর বন্ধু’ ভারত!
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারতকে যা দিয়েছি সারা জীবন মনে রাখবে”। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন “ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মত”!
স্ত্রীর সম্পত্তিতে তো স্বামীর অধিকার থাকা বাঞ্ছনীয়। সেজন্যই আজ বাংলাদেশের সবকটা নদী ভারতের অধিকারে! বাংলাদেশের রাস্তাগুলোতে চলছে ভারতীয় ট্রাক বহর! রেলপথ ভারতের জন্য উন্মুক্ত! সমুদ্রবন্দরে ভারতের অবাধ অধিকার প্রতিষ্ঠিত! বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল ভারতের নজরদারীতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান থেকে মন্ত্রণালয়ের সচিব বেশিরভাগ পদ ভারতীয় র’ অপারেটরে পূর্ণ! পুলিশ প্রশাসনে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ভারতীয় ক্যাডারদের দৌরাত্ম। তাদের অস্ত্র মুসলমানদের ক্রসফায়ারে হত্যা করার জন্য উন্মুক্ত।
দেশের মুসলমান যুবকরা বেকার, অথচ লক্ষ লক্ষ ভারতীয়রা এদেশে চাকরী করে, ব্যবসা করে ভারতে টাকা পাচার করছে। ভারত এখন বাংলাদেশ থেকে সর্বাধিক রেমিটেন্স অর্জনকারী দেশ। দেশের প্রায় সবকটা সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন ভারতের নিয়ন্ত্রণে ।
দেশের ভিতরে ‘ইসকন’, ‘হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য’ ইত্যাদি নামের বেশ কিছু সংগঠন এবং এনজিও মুসলমানদের বাড়ী-ঘর দখল, অত্যাচার, হত্যা প্রভৃতির মাধ্যমে সংখ্যাগুরু মুসলমানদের ভিতর ত্রাস সঞ্চার করে রেখেছে। এসবই নিত্যদিনের খবর। তারপরও বাংলাদেশ নাকি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র!
বিজেপির গুরু ভিডি সাভারকর ১৯২৩ সালে হিন্দুর সংজ্ঞা দিয়ে বলেছিলেন, “হিন্দু এমন এক মানুষ যিনি সিন্ধু থেকে সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ভারতবর্ষকে নিজের পিতৃভূমি, পূণ্যভূমি এবং তার ধর্মের জন্মস্থান বলে মনে করে”। ভারত তোষণকারী আওয়ামীলীগ নেতানেত্রীরা, ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্য যতই ভারতের গুনগান করুক, ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র বলে যতই প্রচার করুক না কেন, ভারত বন্ধুত্বের একটা নজীরও স্থাপন করতে পারেনি। যারা ‘৭১সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপমা টেনে জনগনের মগজ ধোলাই করতে চান, তাদের জানিয়ে দিন ভারত আমাদের স্বাধীনতার জন্য সেনা অভিযান করেনি, তাদের উদ্দেশ্য ছিল, পাকিস্তান ভেঙ্গে দূর্বল করে ফেলা এবং বাংলাদেশ নামক পূর্ববাংলাকে ১৯৪৭ এর আগের হিন্টারল্যান্ড বা ভারতের তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিনত করা, যা আজকের বাস্তবতা।
১৭ কোটি মুসলমানের দেশটাকে ভারত জল, স্থল আকাশ সমুদ্র চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে। আজ প্রয়োজন নবজাগরণের, সৎ বন্ধু অন্বেষণের এবং প্রয়োজন আত্মবাদে বলীয়ান হয়ে ওঠার। বাংলাদেশের শোষিত মানুষকে আহ্বান জানাই! বিলীন হয়ে যাওয়ার আগে আত্মবলে বলীয়ান হয়ে একবার জেগে উঠুন! আমাদের প্রিয় রাসূল (সাঃ) আমাদের শিখিয়েছেন “ক্ষমতা মদমত্ত জালিমের জুলুমবাজির প্রতিবাদে সত্য কথা বলা ও সত্য মতের প্রচারই সর্বোৎকৃষ্ট জিহাদ”। আসুন আমরা সকলে এক হয়ে সেই জিহাদে প্রবৃত্ত হই। প্রিয় দেশটাকে দুর্বৃত্তের হাত থেকে রক্ষা করি!
Monday, September 14, 2020
সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা
সাম্রাজ্যবাদের সাথে সাম্প্রদায়িকতার, বিশেষতঃ সমসাময়িক কালের সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদের রয়েছে একটি ভাই-ভাই সম্পর্ক। সাম্রাজ্যবাদ হলো মূলতঃ একটি অর্থনৈতিক-সামাজিক ব্যবস্থা। সমাজ ব্যবস্থার ঐতিহাসিক বিবর্তনের ধারায় সেটি হলো পুঁজিবাদের একটি চূড়ান্ত রূপ, তার সর্বোচ্চ স্তর। এদিকে, সাম্প্রদায়িকতা হলো মূলতঃ ভাবধারা অবলম্বনে সৃষ্ট একটি সামাজিক-রাজনৈতিক উপাদান। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী তা এক ভয়াবহ জঙ্গিবাদের রূপ নিয়েছে। এতদসত্ত্বেও, সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা পরস্পর যুক্ত এবং তারা পরস্পরকে পরিপুষ্ট করার মধ্য দিয়ে সৃজীত হয়ে থাকে। একথার স্বাক্ষী হলো ইতিহাস। লুটপাটতন্ত্র ও গণতন্ত্রহীনতার পাশাপাশি, সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা হলো আমাদের দেশের সামনে বর্তমানে প্রধান বিপদ।