হায়দরাবাদ গণহত্যা ও গণধর্ষণ ১৯৪৮
লিখাঃ Bahauddin Kabir Bai
২ লাখেরও বেশী মুসলিমদের গণহত্যা ও গণধর্ষণের চেপে রাখা ইতিহাস!
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার সময় ৫০০ এর বেশি ছোট ছোট রাজ্য ছিল, ব্রিটিশ সাম্রাজের অধীনে রাজা শাসিত রাজ্য যাদেরকে বলা হত প্রিন্সলি স্টেট। তাদের একেকজনের সাথে বৃটিশের একেক শর্ত ছিল। বৃটিশরা সবাইকে এদের অধীনে নিয়ে এসেছিল কিন্তু বাংলার মত দখল করেনি। স্বাধীনতার সময় তাঁদের বলা হল; হয় ভারতে যোগ দাও, না হয় পাকিস্তানে অথবা নিজেরাই স্বাধীন থাক। হায়দ্রাবাদ, কাশ্মির, সিকিম সহ কিছু রাষ্ট্র নিজেরাই স্বাধীন থাকতে চেয়েছিল, হয়েছিলও কিছু দিনের জন্য। হায়দ্রাবাদ এর নিজাম স্বাধীনতা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
সংবাদ সংস্থা ‘ বি বি সি’ এর রিপোর্ট অনুযায়ী-ঃ
“Historians say their desire to prevent an independent Muslim-led state taking root in the heart of predominantly Hindu India was another worry.”
অর্থাৎ ইতিহাসবিদগণের মতে হিন্দু প্রধান ভারতের মাঝে একটি স্বাধীন মুসলিম পরিচালিত প্রদেশ তাদের চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছিল। “
১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ সালে ‘অপারেশন পোলো’ সাংকেতিক নামে ভারতীয় সেনাবাহিনী চারদিক থেকে হায়দ্রাবাদ আক্রমণ শুরু করে। এ অসম লড়াইয়ে চারদিন প্রতিরোধ করে অবশেষে পরাজিত হয় হায়দ্রাবাদ বাহিনী। ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে সিকান্দারাবাদে ভারতীয় মেজর জেনারেল জয়ন্ত নাথ চৌধুরীর নিকট আত্মসমর্পণ করেন হায়দ্রাবাদের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল সাইয়েদ আহমেদ এল এদরুস। স্বাধীনতা হারিয়ে হায়দ্রাবাদ ভারতের একটি প্রদেশে পরিণত হয়।
হায়দ্রাবাদ দখলের পরপরই গণহত্যার খবর আসতে থাকে। আবার ভারতজুড়ে মুসলিমদের গণঅসন্তোষের ভয়ে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু কংগ্রেসের সংসদ সদস্য পন্ডিত সুন্দরলালের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন যাতে হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মেরই সদস্য ছিল। এ কমিটি হায়দ্রাবাদ ঘুরে এসে তাদের রিপোর্ট জমা দেয় যা সুন্দরলাল রিপোর্ট নামে পরিচিত। নেহেরু থেকে শুরু করে মনমোহন পর্যন্ত, ভারত সরকার এ রিপোর্ট সম্পর্কে গোপনীয়তা বজায় রেখেছে। গণহত্যার বিষয়ে বহির্বিশ্ব ও ভারতের জনগণকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়। সর্বশেষে ২০১৩ সালে দিল্লীর নেহেরু স্মৃতি জাদুঘরে এ রিপোর্ট জনসম্মুখে আসে।
সুন্দরলাল কমিটির মতে, খুব কম করে ধরলেও ২৭০০০ থেকে ৪০,০০০ মানুষ নিহত হয়েছিলেন। যদিও এ জি নুরানি ও অন্যান্য গবেষকদের মতে এ সংখ্যা দুই লাখ বা তার থেকেও বেশী। কমিটির রিপোর্টে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভারতীয় সেনাবাহিনী এ সকল গণহত্যায় সরাসরি জড়িত ছিল। সেনাবাহিনী মুসলিম পুরোপুরি নিরস্ত্র করলেও হিন্দুদের তো নিরস্ত্র করা হয় নি বরং সেনাবাহিনী উৎসাহিত করেছে আর কিছু ক্ষেত্রে বাধ্য করেছে স্থানীয় হিন্দুদের, মুসলিমদের বাড়িঘর ও দোকানপাট লুটপাট করার জন্য।
রিপোর্টের কিছু তথ্যঃ
“বেশ কয়েক জায়গায়, সামরিক বাহিনীর সদস্যরা শহর ও গ্রাম থেকে মুসলিম পুরুষদের ধরে নিয়ে এনে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে।”
“অনেক জায়গায় আমাদের দেখানো হয় কুয়া যেগুলো ছিল পচা লাশে ভরা। এ রকম এক ক্ষেত্রে আমরা ১১ টি লাশ দেখেছি যার মধ্যে ছিল একজন মহিলা যার ছোট শিশুটি তার স্তনের সাথে লেগেছিল।”
“দেখেছি ডোবা-নালার মধ্যে লাশ ছড়িয়ে আছে। বেশ কয়েক জায়গায় দেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল ; আমরা গিয়ে দেখেছি পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া হাড় আর খুলি এখনও সেখানে পড়ে আছে।”
“হাজার হাজার পরিবার ভেঙ্গে গিয়েছিল, শিশুরা তাদের পিতামাতার কাছ থেকে আর স্ত্রীরা তাদের স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। মহিলা ও তরুণীদের ধাওয়া করা হত আর ধর্ষণ করা হত”।
এইখানে বলতে চাই হায়দরাবাদ শহরের পতনের ঘটনাটি বর্ণিত আছে কাসীদায়ে শাহ নিয়ামাতুল্লাহ এর ৩৮ নম্বর প্যারাতে, যেটি লিখিত হয়েছিল ১১৫২ সালে খ্রিস্টাব্দেঃ
"অনুরূপ হবে পতন একটি শহর মুমিনদের
তাহাদের ধনসম্পদ যাবে দখলে হিন্দুদের"
বিস্তারিত পড়ুনঃ
১. সুন্দরলাল কমিটির রিপোর্ট লিঙ্ক - https://www.scribd.com/
২. উইকিপিডিয়া লিঙ্কঃ https://en.wikipedia.org/
৩. Hyderabad 1948: India's hidden massacre - https://www.bbc.com/news/
( ছবিতে হায়দরাবাদের পতনের পর বল্লভ ভাই প্যাটেল ও হায়দরাবাদের নিজাম )
No comments:
Write Comments