Tuesday, September 15, 2020

বাংলাদেশ কি হায়দারাবাদের পথে?

 বাংলাদেশ কি হায়দারাবাদের পথে?

■■■■■■■■■■■■■■
নব্বই দশকের শেষের দিকে একটা বই লিখেছিলাম, বইটির নাম ছিল ‘হায়দারাবাদ ট্রাজেডি ও আজকের বাংলাদেশ’। সেখানে আশংকা প্রকাশ করেছিলাম, বাংলাদেশের পরিণতিও কি হায়দারাবাদের পথ ধরে এগোবে! বইটি প্রকাশ করেছিল, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ। বইটা এখন আর বাজারে নেই, প্রিন্ট ও পাওয়া যায়না। হয়ত দরকার নেই, কারণ ‘হায়দারাবাদ’ নামটাই আজ পৃথিবীর মানচিত্র থেকে বিলুপ্ত, নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে!

তবে আমার আশংকার ইতিহাস বিলুপ্ত হয়নি। শীঘ্রই হায়দারাবাদের ইতিহাস হয়ত বাংলাদেশ হয়ে ফিরে আসতে যাচ্ছে। তাই হায়দারাবাদের ইতিহাস প্রত্যেকটি বাংলাদেশীর জানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ হায়দারাবাদের করুণ ইতিহাস বাংলাদেশের মানুষকে অনেককিছু বলতে চায়, জানাতে চায়, সতর্ক করতে চায়!


কী ছিল হায়দারাবাদ?


পৃথিবীর বিস্ময়, জ্যোতির পাহাড়, ‘কোহিনুর’ হীরার জন্মদাত্রী, হীরক-আকর সমৃদ্ধ গোলকুন্ডার কন্যা হায়দারাবাদ। গোদাবরী, কৃষ্ণা, তুঙ্গভদ্রা, পূর্ণা, ভীমা, পেনগঙ্গা, ওয়ার্ধা, মুসী, প্রানহিটা নদী বিধৌত সুজলা সুফলা দেশ হায়দারাবাদ।

ইতিহাসখ্যাত অজন্তা-ইলোরা গুহা। আওরঙ্গাবাদ, ওসমানাবাদ শহর। গোলকুন্ডা, গুলবার্গ, ওয়ারাংগাল, রাইচুর, পারেন্দা, নলদূর্গ প্রভৃতি ঐতিহাসিক দূর্গের ঐতিহ্যমণ্ডিত হায়দারাবাদ । হীরক, স্বর্ণ, লৌহ, কয়লা, অভ্র প্রভৃতি মূল্যবান আকরিক সম্পদে সমৃদ্ধ হায়দারাবাদ। মক্কা মসজিদ, চার-মিনার সৌধ মসজিদ সহ পাঁচশ বছরের মুসলিম শাসনের আভিজাত্য সম্বলিত হায়দারাবাদ, আজ নিঝুম গোরস্থানে নিভে যাওয়া এক প্রদীপের মত, নাম নিশানাহীন, ভারত শাসিত তেলেঙ্গানা অঙ্গ-রাজ্য মাত্র!


বাংলাদেশের আয়তনের তুলনায় বড় (৮২,৬৯৬ বর্গ মাইল) বিস্তৃত দেশীয় রাজ্যগুলির মধ্যে সুবিশাল রাজ্য ছিল হায়দারাবাদ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনেও একধরণের স্বাধীন রাজ্য হিসেবে বিবেচিত হত। হায়দারাবাদের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ছিল। নিজস্ব মুদ্রা ছিল, সেনাবাহিনী ছিল, আইন আদালত ছিল, বিচার ব্যবস্থা ছিল, হাইকোর্ট ছিল, শুল্ক বিভাগ ছিল। নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, ভাষা ছিল। নিজস্ব স্বাধীন পতাকা ছিল, জাতীয় সঙ্গীত ছিল , দেশে দেশে নিজস্ব রাষ্ট্রদূত ছিল, এমনকি জাতিসংঘে নিজস্ব প্রতিনিধি ও ছিল। অর্থাৎ একটা স্বাধীন দেশের যা যা পদমর্যাদা থাকে, সবই হায়দারাবাদের ছিল। তাছাড়াও ১৯৩৫ সালের গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া এ্যাক্টে হায়দারাবাদকে স্বাধীন মর্যাদা দান করে বলা হয়েছিল, দেশীয় রাজ্যগুলির পদমর্যাদা এবং স্বাভাবিক কার্যাবলি, স্বাধীন ভারতের কাছে রাজ্যগুলির অনুমতি ব্যতিরেকে হস্তান্তর করা যাবেনা। তারপরও নাজীহিন্দুত্ববাদী ভারত আন্তর্জাতিক সকল আইন-কানুন নর্ম উপেক্ষা করে হায়দারাবাদে সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে দেশটি দখল করে নেয়।


ভারত কিভাবে হায়দারাবাদ দখল করলো?


নাজী হিন্দুত্ববাদী ভারতের আশপাশের রাজ্যগুলি দখল করার ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে তারা কিছু এজেন্টের মাধ্যমে প্রথমে দেশের অভ্যন্তরে বিরোধ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তারপর সেই সুযোগে দুর্বল দেশটির উপর বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দেশটি দখল করে নেয়। ৪৭সালের পার্টিশনের সময় যেমনটা আমরা দেখেছি, ত্রিবাঙ্কুরে, যোধপুরে, ভূপালে, জুনাগড়ে এবং হায়দারাবাদে। পরে সিকিমে।

ফিরে আসি হায়দারাবাদের কথায়

মুসলিম শাসিত হায়দারাবাদের জন্মলগ্ন থেকে দেশটির জনগণ কোনদিন সাম্প্রদায়িকতা কাকে বলে জানতোনা। সেই হায়দারাবাদে হিন্দু মহাসভা, আর্য সমাজ প্রভৃতির শাখা সৃষ্টি করে ভারত সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করলো।


বংশ পরম্পরায় প্রচলিত জাতীয় সংগীতের বিরুদ্ধে, গান্ধীজির নির্দেশে, তার শিষ্য রামানন্দ তীর্থ, নরসীমা রাও(ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী), ওয়াই বি চ্যাবন প্রমূখ, ‘বন্দেমাতরম’ কে জাতীয় সঙ্গীত করার আন্দোলন শুরু করে দিল।


মোগল আমল থেকে প্রচলিত হায়দারাবাদের নিজস্ব জাতীয় ভাষা, উর্দুভাষার পরিবর্তে হিন্দুস্তানী ভাষা প্রচলন করার দাবীতে ভাষা আন্দোলন শুরু করা হল।


ষ্টেট কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রামানন্দ তীর্থ’র মাধ্যমে বর্ডার এলাকা গুলোতে অস্ত্রধারী ক্যাডারদের জড় করে সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে, হায়দারাবাদের সীমান্ত অঞ্চলকে ফ্রিজোন ঘোষণা করলো ।

তারপর, শ্রেণী সংগ্রামী নামধারী কমিউনিস্টদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ সৃষ্টি করে হায়দারাবাদ দখলের প্রস্তুতিমূলক ড্রেস রিহার্স্যাল শেষ করলো! এবার দেশটি দখলের ফাইনাল মঞ্চায়নের পালা।


প্রথম ভাগে, বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিদের মাধ্যমে হায়দারাবাদকে ভিতর থেকে অস্থিতিশীল এবং জনগণকে বিভক্ত ও দুর্বল করে ফেলা হল, যাতে করে সেনাবাহিনীর সামান্য আঘাতেই হায়দারাবাদের পতন ঘটে।


আগ্রাসী ভারতের হায়দারাবাদ দখলের নক্সা বা ব্লু-প্রিন্ট পর্যালোচনা করলে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক রাজনীতির বেশ কিছু সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যাবে।


১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট স্বাধীন পাকিস্তানের ঘোষণা দেয়া হল। এবং ঐদিনে হায়দারাবাদও স্বাধীনতা ঘোষণা করলো। বর্ণবাদী হিন্দু নেতারা হায়দারাবাদের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারলনা! জওহরলাল নেহেরু হুঙ্কার দিয়ে বললেন ‘যদি এবং যখন প্রয়োজন মনে করবো, হায়দারাবাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু করা হবে। নেহেরুর এই দাম্ভিক উক্তি সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে ১৯৪৮ সালের ৩০ জুলাই তৎকালীন বৃটিশ বিরোধীদলীয় নেতা উইনস্টন চার্চিল কমন্স সভায় বলেছিলেন, “Nehru’s threat to the language, which Hitler might have used the devouring of Austria”( B K Bawa.The last Nizam)


দেশের ভিতরে নানান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পর ভারত চূড়ান্তভাবে হায়দারাবাদ দখলের পরিকল্পনা করলো। লেঃ জেঃ ই এম গোর্দাদ, জিএসও সাউদার্ন কমান্ড-এর উপর আক্রমণের প্ল্যান তৈরির ভার দেয়া হল। তাকে দেয়া হল —

১) একটি আর্মার্ড বিগ্রেড

২) ১৭ ডোগরা রেজিমেন্টের থার্ড ক্যাভালরি ও নবম ব্যাটালিয়ন

৩) নবম-ইনফ্যান্ট্রি ব্যটালিয়নসহ আরও ৩ টি ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন

৪) ৪টি অতিরিক্ত ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন

৫) ৩ রেজিমেন্ট ফিল্ড আর্টিলারি ও একটি এ্যান্টি ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট

৬) ১৮ ক্যাভালরি সার্ভিস মেইনটেইনেন্স ট্রুপস

৭) বিপুল সংখ্যক ফোরম্যান ও ষ্টুয়ার্ট ট্যাংক

৮) রয়্যাল ইন্ডিয়ান বিমান বাহিনী

অপর পক্ষে হায়দাবাদের ছিল — মাত্র,

১) ১২ হাজার সেনা

২) ৮ টি ২৫ পাউন্ডের কামান

৩) ৩ রেজিমেন্ট সেনা যানবাহন

৪) ১০ হাজার পুলিশ ও কাস্টম বাহিনী, ও কিছু জানবাজ বেসরকারি রাজাকার বাহিনী


১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের প্রাণপ্রিয় নেতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ ইন্তেকাল করলেন, সমস্ত মুসলমান জাতি তখন শোকে মূহ্যমান, ঠিক সেই সময়টিকে হায়দারাবাদ আক্রমণের উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নিলেন ভারতীয় খলনায়করা।


১৯৪৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারতীয় বাহিনী, মেঃ জেঃ জে এন চৌধুরির নেতৃত্বে হায়দারাবাদ অভিমুখে ত্রিমূখী অভিযান শুরু করলো।‌ অভিযানের নাম দেয়া হল ‘অপারেশন পোলো’। ১৯৪৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মাত্র ৫ দিনের যুদ্ধে, হায়দারাবাদ বাহিনীর সেনাপতি মেজর জেনারেল আল ইদরুস বেইমানী করে ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এভাবেই চিরতরে নিভে যায় স্বাধীন হায়দারাবাদের স্বাধীনতার প্রদীপ! আজ হায়দারাবাদ নামটির অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে হিন্দুত্ববাদীরা নাম দিয়েছ তেলেঙ্গানা। শকুনের দল স্বাধীন দেশটিকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু প্রভৃতি রাজ্যের মধ্যে বিলিবণ্টন করে দিয়েছে। হায়দারাবাদের নামনিশানা পর্যন্ত পৃথিবীর মানচিত্রে আর অবশিষ্ট নেই!


ভারতীয় সাংবাদিক ভি টি রাজশেখর এক প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘মুসলমানদের বড় অক্ষমতা তারা নাজীহিন্দুদের মনের কথা বুঝতে সক্ষম হয়নি’। কথাটির সত্যতা বাংলাদেশের মুসলমানরা আজ হাড়েহাড়ে উপলব্ধি করতে পারছে! প্রাণের কানুকে ভালবেসে আজ তারা গভীর খাদের শেষ কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। সামান্য আঘাতেই হায়দারাবাদের মত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে!


ভারত কোনদিনই বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র ছিলনা। তার বহু প্রমাণ দেয়া যায়। স্থানাভাবে তা দেয়া সম্ভব নয়। স্মৃতি তাজা করার জন্য মাত্র দু একটা তুলে ধরতে চাই। ১৯৪৭ থকে ৫০ সাল পর্যন্ত জওহরলাল নেহেরু ৩ বার পুলিশ এ্যাকশন করে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান (আজকের বাংলাদেশ) দখল করার পরিকল্পনা করে। এ তথ্য ফাঁস করেছেন মিঃ নিরোদ সি চৌধুরী তাঁর এক প্রবন্ধে। জয়প্রকাশ নারায়ণ সৈন্য ঢুকিয়ে পূর্ব পাকিস্তান গ্রাস করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। শুধু কি নেহেরু- জয়প্রকাশ! প্যাটেল বলেছিলেন ‘পূর্ববাংলাকে ৬মাসের মধ্যেই আমাদের পা’য়ে এসে পড়তে হবে। ‘৪৭ থেকে বর্তমান মোদির জমানা পর্যন্ত ভারত প্রতিটি পদক্ষেপে নিজেকে পররাজ্য লোভী, চরম হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক দেশ বলে প্রমাণ রেখেছে! তারপরও ৯০% মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের নাকি তার ‘নাড়ীর বন্ধু’ ভারত!


বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারতকে যা দিয়েছি সারা জীবন মনে রাখবে”। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন “ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মত”!


স্ত্রীর সম্পত্তিতে তো স্বামীর অধিকার থাকা বাঞ্ছনীয়। সেজন্যই আজ বাংলাদেশের সবকটা নদী ভারতের অধিকারে! বাংলাদেশের রাস্তাগুলোতে চলছে ভারতীয় ট্রাক বহর! রেলপথ ভারতের জন্য উন্মুক্ত! সমুদ্রবন্দরে ভারতের অবাধ অধিকার প্রতিষ্ঠিত! বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল ভারতের নজরদারীতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান থেকে মন্ত্রণালয়ের সচিব বেশিরভাগ পদ ভারতীয় র’ অপারেটরে পূর্ণ! পুলিশ প্রশাসনে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ভারতীয় ক্যাডারদের দৌরাত্ম। তাদের অস্ত্র মুসলমানদের ক্রসফায়ারে হত্যা করার জন্য উন্মুক্ত।


দেশের মুসলমান যুবকরা বেকার, অথচ লক্ষ লক্ষ ভারতীয়রা এদেশে চাকরী করে, ব্যবসা করে ভারতে টাকা পাচার করছে। ভারত এখন বাংলাদেশ থেকে সর্বাধিক রেমিটেন্স অর্জনকারী দেশ। দেশের প্রায় সবকটা সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন ভারতের নিয়ন্ত্রণে ।


দেশের ভিতরে ‘ইসকন’, ‘হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য’ ইত্যাদি নামের বেশ কিছু সংগঠন এবং এনজিও মুসলমানদের বাড়ী-ঘর দখল, অত্যাচার, হত্যা প্রভৃতির মাধ্যমে সংখ্যাগুরু মুসলমানদের ভিতর ত্রাস সঞ্চার করে রেখেছে। এসবই নিত্যদিনের খবর। তারপরও বাংলাদেশ নাকি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র!


বিজেপির গুরু ভিডি সাভারকর ১৯২৩ সালে হিন্দুর সংজ্ঞা দিয়ে বলেছিলেন, “হিন্দু এমন এক মানুষ যিনি সিন্ধু থেকে সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ভারতবর্ষকে নিজের পিতৃভূমি, পূণ্যভূমি এবং তার ধর্মের জন্মস্থান বলে মনে করে”। ভারত তোষণকারী আওয়ামীলীগ নেতানেত্রীরা, ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্য যতই ভারতের গুনগান করুক, ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র বলে যতই প্রচার করুক না কেন, ভারত বন্ধুত্বের একটা নজীরও স্থাপন করতে পারেনি। যারা ‘৭১সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপমা টেনে জনগনের মগজ ধোলাই করতে চান, তাদের জানিয়ে দিন ভারত আমাদের স্বাধীনতার জন্য সেনা অভিযান করেনি, তাদের উদ্দেশ্য ছিল, পাকিস্তান ভেঙ্গে দূর্বল করে ফেলা এবং বাংলাদেশ নামক পূর্ববাংলাকে ১৯৪৭ এর আগের হিন্টারল্যান্ড বা ভারতের তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিনত করা, যা আজকের বাস্তবতা।


১৭ কোটি মুসলমানের দেশটাকে ভারত জল, স্থল আকাশ সমুদ্র চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে। আজ প্রয়োজন নবজাগরণের, সৎ বন্ধু অন্বেষণের এবং প্রয়োজন আত্মবাদে বলীয়ান হয়ে ওঠার। বাংলাদেশের শোষিত মানুষকে আহ্বান জানাই! বিলীন হয়ে যাওয়ার আগে আত্মবলে বলীয়ান হয়ে একবার জেগে উঠুন! আমাদের প্রিয় রাসূল (সাঃ) আমাদের শিখিয়েছেন “ক্ষমতা মদমত্ত জালিমের জুলুমবাজির প্রতিবাদে সত্য কথা বলা ও সত্য মতের প্রচারই সর্বোৎকৃষ্ট জিহাদ”। আসুন আমরা সকলে এক হয়ে সেই জিহাদে প্রবৃত্ত হই। প্রিয় দেশটাকে দুর্বৃত্তের হাত থেকে রক্ষা করি!


লেখক: আরিফুল হক
বিশিষ্ট নাট্যকার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, কলাম লেখক।

https://bit.ly/2FpdYKz

Read More

Monday, September 14, 2020

সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা

সাম্রাজ্যবাদের সাথে সাম্প্রদায়িকতার, বিশেষতঃ সমসাময়িক কালের সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদের রয়েছে একটি ভাই-ভাই সম্পর্ক। সাম্রাজ্যবাদ হলো মূলতঃ একটি অর্থনৈতিক-সামাজিক ব্যবস্থা। সমাজ ব্যবস্থার ঐতিহাসিক বিবর্তনের ধারায় সেটি হলো পুঁজিবাদের একটি চূড়ান্ত রূপ, তার সর্বোচ্চ স্তর। এদিকে, সাম্প্রদায়িকতা হলো মূলতঃ ভাবধারা অবলম্বনে সৃষ্ট একটি সামাজিক-রাজনৈতিক উপাদান। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী তা এক ভয়াবহ জঙ্গিবাদের রূপ নিয়েছে। এতদসত্ত্বেও, সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা পরস্পর যুক্ত এবং তারা পরস্পরকে পরিপুষ্ট করার মধ্য দিয়ে সৃজীত হয়ে থাকে। একথার স্বাক্ষী হলো ইতিহাস। লুটপাটতন্ত্র ও গণতন্ত্রহীনতার পাশাপাশি, সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা হলো আমাদের দেশের সামনে বর্তমানে প্রধান বিপদ।

সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার মধ্যে সম্পর্ক হলো টাকার এপিঠ-ওপিঠের মতো। এগুলো হলো একই বিপদের দুটি আপাতঃ ভিন্ন মুখ মাত্র। একটিকে সাথে নিয়ে (বা বাঁচিয়ে রেখে) অন্যটিকে আঘাত করার কোনো সুযোগ নেই। একটির বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য অপরটির বিরুদ্ধে সংগ্রামকে গৌণ বিবেচনা করাটা, অথবা আপাততঃ স্থগিত রাখার কথা ভাবাটা, শুধু গুরুতর ভ্রান্তিই নয় তা বাস্তবিকভাবে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, সাম্রাজ্যবাদ অথবা সাম্প্রদায়িকতারই সেবা করার মতো কাজে পরিণত হতে বাধ্য।
সমসাময়িক বিশ্ব বাস্তবতায় ‘অখণ্ড বিশ্ব’, ‘গ্লোবাল ভিলেজ’, ‘বিশ্বজনীন পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্ক’, ‘এক কেন্দ্রীক বিশ্ব’ ইত্যাদির অভিঘাত বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক ঘটনাবলিতে অবধারিতভাবে এসে পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রেই তা নির্ধারণমূলক উপাদান হিসেবে কাজ করছে। সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা হলো বর্তমান বিশ্বের প্রধান ও একচ্ছত্র কর্তৃত্বকারী শক্তি। এই বৈশ্বিক শক্তি কোনোভাবেই এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলকে, দক্ষিণ এশিয়াকে ও বাংলাদেশকে তার স্ট্র্যাটাজির বাইরে যেতে দিতে পারে না। এই অঞ্চলে ভারত একটি বড় শক্তি। আমেরিকান লবিকে সেদেশের নিয়ন্ত্রকের পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে বহু ক্ষেত্রেই ভারতের মাধ্যমে আমেরিকা স্ট্র্যাটাজিক স্বার্থ রক্ষার কাজটি সম্পাদিত করছে। ফলে, সেই ইন্দো-আমেরিকান লবির মোটা দাগের নিয়ন্ত্রণেই বাংলাদেশের ঘটনাবলির গতি প্রকৃতি বহুলাংশে নির্ধারিত হচ্ছে বলে ধরে নেয়াটা খুব ভুল হবে না।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ গোটা বিশ্বকে তার নিয়ন্ত্রণে ও শোষণের জালে আবদ্ধ রাখতে তৎপর রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য হলো তেল সম্পদের বিশাল উৎস। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখাটা আমেরিকার বিশ্ব স্ট্র্যাটাজির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই উদ্দেশ্যে জায়নবাদী ইসরাইল রাষ্ট্রটিকে লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করার পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোতে, তাদের আজ্ঞাবাহী শক্তির নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে আমেরিকা তৎপর। মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেন কোনো ‘ইসলামিক আন্দোলন’ শক্তিশালী না হয়ে উঠতে পারে, কিংবা এ ধরনের কোনো দেশ যেন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সেক্যুলার শক্তির হাতে চলে যেতে না পারে- সে বিষয়ে আমেরিকা সজাগ ও তৎপর রয়েছে। ‘সর্প হয়ে দংশন কর, আর ওঝা হয়ে ঝাড়ো’র নীতিও সে প্রয়োগ করে চলেছে। সেজন্যই আমেরিকা মুসলমান প্রধান দেশগুলোতে গৃহপালিত ও নিয়ন্ত্রিত ‘ইসলামী দল’কে মদদ দিয়ে চলেছে।
দেশে দেশে নিজ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য সাম্রাজ্যবাদ নানা কলা-কৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে এদেশে তাদের মূল কৌশলটি কী? বাংলাদেশে তাদের পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্য মার্কিনীরা এদেশকে দুর্বল ও অস্থিতিশীল করে রাখতে চায়। সে ক্ষেত্রে ‘নিয়ন্ত্রিত নৈরাজ্যের’ মধ্যে দেশকে নিমজ্জিত রাখাটাই হলো তাদের অনুসরণকৃত কৌশল। সাম্রাজ্যবাদী মহল থেকে বলার চেষ্টা করা হয় যে, জামায়াত কোনো জঙ্গি সংগঠন নয়- এটি হলো একটি ‘উদার ইসলামী দল’। তাদের একথা যে সত্য নয়, তার প্রমাণের অভাব নেই। একথা ঠিক যে জেএমবি, হিজবুত তাহরি ইত্যাদি হলো সন্ত্রাসী সংগঠন। কিন্তু সেই সাথে একথাও ঠিক যে এসব সংগঠনে ক্যাডারের যোগানদাতা, মতাদর্শগত মুরুব্বি, রাজনৈতিক আচ্ছাদন দানকারী হিসেবে যে দলটি কাজ করে সেটি হলো জামায়াত। পরিস্থিতি যেন গণ-বিপ্লবের পথে না যেতে পরে, সেজন্য সাম্প্রদায়িকতা তথা জামায়াত হলো সাম্রাজ্যবাদের শ্রেষ্ঠ রক্ষাকবচ। অতএব বলা যায় যে, সাম্প্রদায়িকতা আঘাতপ্রাপ্ত হলে সাথে সাথে সাম্রাজ্যবাদও আঘাতপ্রাপ্ত হবে।
সাম্রাজ্যবাদ জামায়াতকে সে আশ্রয় দিয়ে চলেছে। কারণ, এরূপ সাম্প্রদায়িক শক্তিকে টিকিয়ে রাখতে পারার সাথে সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি যুক্ত। বিশ্বব্যাপী ও দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদের নীল-নকশা বাস্তবায়নে জামায়াত ও এ ধরনের সাম্প্রদায়িক অপশক্তি হলো তাদের ‘রিজার্ভ ফোর্স’ ও ‘পঞ্চম বাহিনী’। সাম্প্রদায়িকতার সাথে সাম্রাজ্যবাদের বিরাজ করে একটি ভাই-ভাইয়ের সম্পর্ক। সাম্রাজ্যবাদের সহায়তা নিয়ে সাম্প্রদায়িকতা দূর করা যাবে না। একইভাবে, সাম্প্রদায়িকতার সাথে হাত মিলিয়ে সাম্রাজ্যবাদকে নির্মূল করা যাবে না। তাই মনে রাখতে হবে, ‘সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে- লড়তে হবে একসাথে’
Read More

ইস্কন: নমঃশূদ্রদের উত্থান!




প্রসঙ্গ ইস্কন - প্রক্সি ওয়ার তথা নমঃশূদ্রদের উত্থান! 

লিখাঃ Bahauddin Kabir
প্রিয় পাঠক! প্রক্সি ওয়ার কাকে বলে সেটা কি জানা আছে আপনাদের? মূলত আরেকজনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে শিকার করাকে বলা হয় প্রক্সি ওয়ার।
যেমন 70 এর দশকে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে আফগান যোদ্ধাদের সর্বাত্মকভাবে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করিয়েছিল আমেরিকানরা। আবার তারও আগের দশকে আমেরিকানদের বিরুদ্ধে ভিয়েতনামের দ্বারা প্রক্সি যুদ্ধ করিয়েছিল সোভিয়েত রাশিয়া।
মূলত এই প্রক্সি ওয়ার কে ধরে নেওয়া হয় কুটিল থেকে কুটিলতর সফল যুদ্ধ কৌশল হিসেবে।
অর্থাৎ আপনি নিজে যুদ্ধ করবেন না, কিন্তু আপনার নিজের লেলিয়ে দেয়া কুকুর শত্রুপক্ষের গোশত খাবলে খাবলে খাবে।

আমাদের স্মার্ট কাউবয় মোসাদ কিন্তু ঠিক একই পলিসিতে কাজ করে।
কি লিবিয়া, কি সিরিয়া, কি ইরাক, সব জায়গাতেই মোসাদ সেখানকার শাসকদের অপসারণ করার জন্যে একই পলিসি অবলম্বন করেছে।
--------------------------------------------------------------------------
মোসাদের লেলিয়ে দেয়া মার্কসম্যানেরা কোটি কোটি মুসলমান হত্যা করেছে।
ইহুদীরা নিজেরা যুদ্ধ করে না, তারা অন্যকে দিয়ে যুদ্ধ করায়। যেমন সিরিয়ার বিপর্যয়ের সাথে জড়িত মেন্দি এন সাফাদি ইজরায়েলি ডিপ্লোম্যাট, কিন্তু দ্রুজ শিয়া।
দ্রুজ ধর্ম মূলত শিয়া ইসলামের একটি শাখা। দ্রুজদের ধর্ম বিধানে ইব্রাহিমীর ধর্মসমূহের পাশাপাশি নিওপ্লাতিনিক এবং পিথাগোরীয় মতবাদের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। দ্রুজগণ নিজেদেরকে “আহলে তাওহীদ” (একেশ্ববাদী মানুষ বা একতাবদ্ধ মানুষ) অথবা “আল মুয়াহিদুন” বলে পরিচয় দেয়।
একইভাবে ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স এর অধিকাংশ সদস্যই দ্রুজ সম্প্রদায় এবং উপজাতি সম্প্রদায়ের।
প্রত্যেক ইহুদির কমপক্ষে দুটি পাসপোর্ট থাকে একটি থাকে খৃষ্টান নামে আরেকটি থাকে ইহুদি নামে।
ইহুদিবাদী মগজ ধোলাই এর কাজ গুলি তথা নৈরাজ্য সৃষ্টি করা কাজগুলি তারা ক্রিশ্চান নামের পাসপোর্ট দিয়ে করে থাকে।
প্রিয় পাঠক! এই ভূমিকার মূল উদ্দেশ্য হলো কাপুরুষ ইহুদি এবং ইহুদীবাদীদের ওয়ার্কিং প্যাটার্ন সম্পর্কে পুনর্বার মাইন্ড ম্যাপ তৈরি করা।
এবার আসুন আমরা একটু ইসকন তৈরির ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করি, এর প্রথম কারণ হল মানুষ ইসকন এর প্রতিষ্ঠার ইতিহাস জানে না।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
উগ্রবাদী ইহুদি ও হিন্দুদের সংগঠন হল ইসকন।
১৯৬৬ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে এটি নিবন্ধন করা হয় এবং শ্রীল প্রভুপাদ নামে একজন হিন্দুকে সামনে রাখা হয়।

ইহুদি Stephen Goldsmith and Carl Yeargens ছিল ইসকন এর প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি, প্রতিষ্ঠাতা সহযোগী ছিল যথাক্রমে তিন ইহুদি, Michel Grant, Jan এবং James Grune.
বিশাল হিন্দু জনগোষ্ঠীকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্যই ইহুদিরা ইসকন গঠন করেছে এবং কৃষ্ণভক্ত সেজেছে।

সূত্র : বই-সাম্রাজ্যবাদ,সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাস, এস,এম নজরুল ইসলাম।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে কেন ইহুদিরা কৃষ্ণ ভক্ত বৈষ্ণবদের কে বেছে নিয়েছে? এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে।

প্রথমত - ইহুদিরা ইসকনের স্ট্রাকচার কেমন ভাবে তৈরি করেছে, ঠিক একটি মনোথেইস্ট (একেশ্বরবাদী) ধর্মের মত। ব্রিটিশ আমলেও ইহুদিরা একই উদ্দেশ্যে তৈরি করেছিল একেশ্বরবাদী ব্রাহ্মসমাজ। ব্রাহ্মসমাজ ছিল হিন্দুদের থেকে আলাদা। ঠিক তেমনি ভাবে ইসকনানন্দ শুধুমাত্র এক কৃষ্ণের আরাধনা করে।
এরপর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো কৃষ্ণের ওয়ার স্ট্রাটেজী। মহাভারতের কাহিনী অনুযায়ী দূর্যোধন এবং অর্জুন যথাক্রমে কৌরব এবং পান্ডবদের পক্ষ থেকে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে কৃষ্ণের কাছে যায়।

একপর্যায়ে দূর্যোধন কৃষ্ণের ১০০০০০ প্রশিক্ষিত সেনাদল গ্রহণ করে (এভাবেই কৌরবরা অক্ষৌহিণী বাহিনী গঠন করে, প্রতি অক্ষৌহিনী তে ২ লাখ ১৮হাজার, ৭০০ গণনা করা হয়)। কিন্তু এর বিপরীত দিকে অর্জুন শুধুমাত্র কৃষ্ণ কে তার পক্ষে থাকার জন্য আহ্বান জানায়। কৃষ্ণ এই শর্তে রাজি হয় যে সে অর্জুনের রথের সারথি হবে এবং অর্জুনকে যুদ্ধ পরিচালনার সমস্ত নির্দেশনা দান করবে, কিন্তু নিজে যুদ্ধ করবে না!!!

কৃষ্ণ এবং অর্জুনের কথোপকথন সংকলনই কথিত ভগবদ্গীতা নামে পরিচিত।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে অর্জুন আত্মীয় বন্ধু ও গুরু দ্রোণাচার্য কে দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। তখন কৃষ্ণের কাউন্সেলিং, তথা প্ররোচনা তথা মগজ ধোলাই এর প্রেক্ষাপটে শেষ যুদ্ধ করতে মনস্থ হয়।

পুরো যুদ্ধতেই কৃষ্ণ নিজে অস্ত্র ধারণ না করে অর্জুনকে দিয়ে লড়াই করিয়ে নেয়। সোজা বাংলায় প্রক্সি ওয়ার করায়।
প্রিয় পাঠক! আমাদের বোঝার পয়েন্ট ঠিক এখানেই। মোসাদের ইহুদিদের ওয়ার্কিং স্ট্রাটেজীর সাথে কৃষ্ণের ওয়ার স্ট্রাটেজী পুরোপুরি মিলে যায়।

এছাড়াও ইসকনানন্দের মূল একজন ব্যক্তিত্ব হলো চৈতন্য , তার শ্লোগান ছিল “নির্যবন করো আছি সকল ভূবন।“ অর্থাৎ মুসলমানদেরকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করা চৈতন্য তথা বিদ্যানন্দের মূল অভিপ্রায়।

এছাড়াও ইহুদিরা যে যৌন নৈরাজ্যবাদ প্রচার করতে চায়, সেজন্য জগন্নাথ তথা কৃষ্ণ একটি আদর্শ মাধ্যম। কারণ বৃন্দাবন লীলা নিয়ে গবেষণা করলে আমরা দেখতে পাই ষোলশত গোপিনী কৃষ্ণর চারিত্রিক কলুষতায় জোগান দিতো।

নেপথ্যে থেকে কাজ করা আজকে বিশ্বব্যাপী মন্দার কারণে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অঞ্চলের সচ্ছল মুসলমানদের টাকা গুলি পাচারের জন্য ইসকনানন্দের বি টীম বিদ্যানন্দ একটি বিশাল বড় পাইপলাইন।

এদের কাজ কর্ম অনেকটা ছররা গুলির মত। ছররা গুলি যেমন একত্রে অনেক গুলি নিক্ষেপ করা হয়, ঠিক তেমনি ইহুদিবাদীরা একইসাথে অনেকগুলি এজেন্ডা বিদ্যানন্দের মাধ্যমে মুসলমানদের বিরুদ্ধে থ্রো করেছে। যদিও বা সেটা কৃষ্ণ প্রসাদ ভক্ত অনেক মুসলমান আজ বুঝতে পারছে।

এইখানে একটা মজার ব্যাপার হল ইসকনের প্রভুপাদ তার বাণীর মধ্যে বলেছে, তারা নিজেদেরকে হিন্দু বলে মনে করে না!

শ্রী ঈশোপনিষদ ভূমিকায় প্রভুপাদ স্পষ্ট ভাবে বলেছে," আমরা হিন্দু নই"। এছাড়াও সে নিউ ইয়র্কে ভগবত গীতা লেকচারে বলেছে, আমরা শিক্ষা দিচ্ছি গড কনশাস হওয়ার জন্য। ঈশ্বর হিন্দু ও না মুসলিম ও না, ক্রিশ্চান ও না।" আবার ২১.১২.১৯৬৬ সালে নিউইয়র্ক এর আরেকটি লেকচারে সে বলেছে, আমি ব্রাহ্মণ নই আমি খৃস্টান নই, আমি হিন্দুও নই......। আমি শুধু কৃষ্ণের দাসের দাসের দাস।

অর্থাৎ কি বুঝলেন প্রিয় পাঠক! ইসকনান্দের মাঝেও ইহুদিরা মনোথেইজমের ফ্লেভার দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

এমনকি তারা যে কপালের উপর উপনয়ন অঙ্কন করে সেটাও ইহুদিদের কথিত মাসিহা এক চোখ কানা দাজ্জাল এর অনুসরণে।
Read More

Saturday, August 29, 2020

ইয়াজুজ মাজুজের ফেতনা



ইয়াজুজ মাজুজ আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক, বৈবাহিক, অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্য-চিকিৎসা ও ধর্মীয় প্যাটার্ন পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের ঘুমের প্যাটার্নও পরিবর্তন করে দিয়েছে।

ইয়াজুজ মাজুজের ফেতনা এতো ভয়াবহ যে এরা রাষ্ট্র থেকে আল্লাহ্‌র আইনকে বিতাড়িত করেছে, আল্লাহ্‌র নির্ধারিত অর্থনীতি বাদ দিয়ে নিজেদের অর্থনীতি চালু করেছে, আল্লাহ্‌ যা হালাল করেছেন তা হারাম করেছে (যেমন, ১৮ বছরের নীচে মেয়েদের বিয়ে), আল্লাহ্‌ যা হারাম করেছেন তা হালাল করেছে (যেমন, সুদ, মদ), মানুষের জন্মকে আটকে দেয়ার চেষ্টা করেছে (জন্ম নিয়ন্ত্রণ), চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা চালু করেছে, ফলে চিকিৎসায় রোগমুক্তি হওয়ার পরিবর্তে চিরস্থায়ী অসুখে মানুষ পতিত হয়েছে (যেমন ডায়াবেটিস, ক্যানসার), আখিরাতের সফলতাকে বাদ দিয়ে দুনিয়ার সফলতাকে হাইলাইট করেছে, আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুতে পরিবর্তন করেছে (যেমন, জেনেটিকালি মডিফাইড ফুড), শিল্প কারখানা, মোটরগাড়ি ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ করেছে, নদীতে বাঁধ দিয়ে নদীর গতিকে পাল্টে দিয়েছে, ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্র বানিয়েছে (যেমন, এটম বোম)। তারপরও মানুষরা নাকি ইয়াজুজ মাজুজ দেখে না, ফেতনার জমানা দেখেনা।
ইয়াজুজ মাজুজের দেয়াল ধ্বংস হওয়ার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত ইসলামী সাম্রাজ্যের বিস্তার মদিনা থেকে সুদূর ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। আমাদের দ্বিতীয় খলিফা উমর রাদ্বিআল্লাহু তায়ালা আ'নহুর শাহাদাতের সময় একটি বিশেষ ফেতনার দরজা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। সম্ভবত সেটিই ছিল সেই ইয়াজুজ মাজুজের ফেতনার দরজা বা প্রাচীর। (যদিও বিপরীত মত আছে, কিন্তু সে মত তো কোরআন হাদিস দ্বারা অকাট্য প্রমাণিত নয়, বরং ইয়াজুজ মাজুজকেই কোরআনে ফেতনার ফ্যাসাদের জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর উমর রাদ্বিআল্লাহু তায়ালা আ'নহুর শাহাদাতের মাধ্যমেই পৃথিবী ফেতনা ফ্যাসাদের জমানায় প্রবেশ করে।)
ফলে আমরা দেখতে পাই, মুসলমানদের যে খেলাফত একদা পূর্ব থেকে পশ্চিমে আলো ছড়াতো সে খেলাফত ধীরে ধীরে আঁধারে ঢেকে যায়। এক পর্যায়ে এসে গত শতকে খেলাফত বিলুপ্ত হয়। মুসলমানদের এক জাতি খন্ড বিখন্ড হয়ে পঞ্চাশের বেশি জাতি সৃষ্টি করে।
এর চেয়ে বড় ফেতনা ইসলামী রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আর কি হতে পারে?
আর ব্যক্তিগতভাবে ইয়াজুজ মাজুজের ফেতনা প্রতিটি মানুষকে কামড় দিয়েছে। মানুষকে স্বাভাবিক খাদ্যের পরিবর্তে দূষিত ব্রয়লার ফুড, ফাস্টফুড, টিনজাত খাদ্য, বোতলের পানি খাওয়াচ্ছে। মানুষের বিবাহ সাদি করার স্বাভাবিক অধিকারকে নষ্ট করেছে, এমনকি রাতকে তারা দিনে পরিণত করেছে। ফলে হাজার হাজার বছর ধরে তৈরি হওয়া স্বাভাবিক ঘুমের সার্কেলকেও নষ্ট করে ফেলেছে। মানুষ এখন আর ই'শার পর ঘুমোতে যায় না, তাহাজ্জুদ পড়ে না, সকালে ঘুমের কারনে ফজরের সালাত অনেকে পড়তে পারে না।
Read More

Tuesday, August 11, 2020

ঢাকাকে রাজধানীর মর্যাদা দেওয়ার কৃতিত্ব মোগলদের

৪০০ বছরের ঢাকার বিদেশিরা

ঢাকার প্রথম সেশন জজ শেরম্যান বার্ড ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিশ ১৭৯০ সালে ব্রিটিশ সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব দেন। সেখানে তিনি জানান, ব্রিটিশ জাতির জন্য বড়ই লজ্জাকর ঘটনা ঘটে গেছে। বাংলায় ভাগ্যান্বেষণে এসে হাজার হাজার ব্রিটিশ নাগরিক মানবেতর জীবন যাপন করছে। ভবঘুরে ও অপরাধী হিসেবে অনেকে জেলেও নিক্ষিপ্ত হয়েছে। বাংলায় ভাগ্যান্বেষী ব্রিটিশ নাগরিকদের আগমন ঠেকাতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ওই বছর থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বা সরকারের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো ব্রিটিশ নাগরিকের বাংলায় আসা নিষিদ্ধ করা হয়। সিরাজুল ইসলাম তাঁর ঐতিহাসিকের নোটবুক বইতে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে দেখিয়েছেন, তখন ব্রিটিশ নাগরিকদের কাছে এমন বিশ্বাস ছিল যে কোনোমতে একবার বাংলামুলুকে পা রাখতে পারলেই কেল্লাফতে।
বাংলার সমৃদ্ধির ইতিহাস কিংবদন্তিকেও হার মানায়। পরশপাথরতুল্য সেই সমৃদ্ধির ছোঁয়ায় নিজেদের ভাগ্য বদলাতে কেবল ব্রিটিশরাই নয়, বরং তাদের অনেক আগে থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন জাতি বারবার এসেছে বাংলায়। তাদের অনেকে স্থায়ী বসতও গড়ে তুলেছে। এ প্রসঙ্গে ফরাসির বিখ্যাত পর্যটক ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ারের একটি মন্তব্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলা রাজ্যে প্রবেশ করার জন্য রয়েছে শত দ্বার, কিন্তু বেরোবার জন্য নেই একটিও।’ তিনি ১৬৬৬ ও ১৬৭০ সালে দুবার এসেছিলেন বাংলায়। তখন ইউরোপের ধারণা ছিল, মিসরই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ। কিন্তু বাংলায় এসে বার্নিয়ারের সেই ধারণা বদলে যায়। বাংলার সমৃদ্ধি দেখে তিনি এ দেশকে বলেছিলেন, ‘বাংলা হচ্ছে বিশ্ব রুপার বেসিন।’ এই সমৃদ্ধিই আলোর আকর্ষণে ছুটে আসা পতঙ্গের মতো পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, আর্মেনিয়ান, ফরাসি, ইংরেজ ও গ্রিকদের টেনে এনেছে এখানে।
বাংলার রাজধানী, মসলিনের শহর, সরু সুগন্ধি চালের শহর, অকল্পনীয় সস্তার শহর ঢাকা হয়ে উঠেছিল তাদের স্বপ্নের শহর—ভাগ্য ফেরানোর ঠিকানা। তাদের অনেকেই আর এই শহরের মায়া কাটিয়ে ফিরতে পারেননি স্বদেশে। এখানেই থেকে গিয়েছিলেন। কালের বিবর্তনে এককালের বিশ্বের সমৃদ্ধতম এই দেশের রাজধানী আজ হতমান। কিন্তু সেই গৌরবের স্মৃতি, ভাগ্যান্বেষণে আসা একসময়ের দরিদ্র, হালের ধনী দেশগুলোর নাগরিকদের নানা স্থাপনা ও নিদর্শন আজও এই মহানগরের গৌরবের দিনগুলোকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
মোগল
ঢাকাকে রাজধানীর মর্যাদা দেওয়ার কৃতিত্ব মোগলদের। সম্রাট জাহাঙ্গীরের সেনাপতি সুবাদার ইসলাম খান দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসে রাজধানীর পত্তন করেছিলেন ১৬১০ সালে। তাঁদের সময়েই ব্যবসা-বাণিজ্যে, শৌর্যবির্যে, নয়নাভিরাম স্থাপনা ও উদ্যানে ঢাকা হয়ে উঠেছিল তৎকালীন বিশ্বের সেরা নগরগুলোর একটি।
ওলন্দাজ
ইউরোপে তখন ভারতের মসলা সোনার চেয়েও দামি। সেই মসলার জন্যই পর্তুগিজদের দেখানো জলরেখা ধরে ভারতে যে দ্বিতীয় ইউরোপীয়দের আগমন, তারা হল্যান্ডবাসী। ঢাকায় তাদের আগমনের তারিখও অজানা। তারা কুঠি স্থাপন করেছিল মিটফোর্ড হাসপাতালের কাছে, ১৬৬৩ সালে। তেজগাঁওয়ে তাদের একটি বাগানবাড়িও ছিল। ওলন্দাজরা ব্যবসা-বাণিজ্যে সফল হতে পারেনি। টেলর উল্লেখ করছেন, ১৭৮৩ সালে ঢাকায় ৩২টি ওলন্দাজ পরিবার ছিল। ইংরেজদের কাছে তারা সহায়-সম্পত্তি তুলে দিয়ে ঢাকার পাট চুকিয়ে ফেলেন। এম হাসান দানীর ঢাকা বইতে উল্লেখ করা হয়েছে, নারিন্দার খ্রিষ্টান কবরস্থানে ১৭৭৫ সালের কুঠিপ্রধান ডি ল্যাংহিটের কবরটিই এখন ঢাকায় ওলন্দাজদের একমাত্র স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে টিকে আছে।
ফরাসি
ঢাকায় ফরাসিদের স্মৃতি বহন করছে পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জ এলাকাটি। ঢাকার নায়েব নাজিম নওয়াজিশ খান ১৭২৬ সালে ফরাসিদের গঞ্জ বসানোর অনুমতি দিলে তারা একটি আবাসন গড়ে তোলে ফ্রেঞ্চগঞ্জ নামে। পরে লোকমুখে এর নাম হয় ফরাশগঞ্জ। তবে এর আগেই ফরাসিদের ঢাকায় আবির্ভাব। সৈয়দ মোহাম্মদ তাইফুর গ্লিম্পসেস অব ওল্ড ঢাকা বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ১৭২৬ সালে ফরাসিরা প্রথম কুঠি করেছিল তেজগাঁওয়ে। প্রধানত মসলিন বস্ত্রের ব্যবসা করত তারা। তবে তারা ইংরেজদের সঙ্গে পেরে ওঠেনি। পলাশীর যুদ্ধের পর এখান থেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে যায়।
পর্তুগিজ
ইউরোপীয়দের মধ্যে ঢাকায় প্রথম এসেছিল পর্তুগিজরা। ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কারের কৃতিত্ব তাদেরই। ভাস্কো দা গামা কালিকট বন্দরে তাঁর জাহাজ ভিড়িয়েছিলেন ১৪৯৮ সালে। উদ্দেশ্য, ভারতের মসলা হাসিল করা। সেই পথ ধরে পরে ইউরোপের আরও অনেকের আগমন। ঢাকায় পর্তুগিজরা প্রথম কবে এসেছিল, তা সঠিক জনা যায় না। পর্তুগিজ পাদির ও পর্যটক মেস্ট্রো ফ্রে সেবাস্টিন মানরিক সপ্তদশ শতকে তিনবার এসেছিলেন বাংলায়। প্রথমবার তিনি ১৬২৮ বা ২৯ সালে আরাকানে যাওয়ার পথে ‘বঙ্গদেশ’ ভ্রমণ করেছিলেন। এর অন্তত ১০০ বছর আগেই বঙ্গদেশে পর্তুগিজদের আগমন ঘটে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন (বঙ্গবৃত্তান্ত: অসীম কুমার রায়, সেবাস্টিন মানরিকের বঙ্গদেশ ভ্রমণ)।
জেমস টেলর তাঁর কোম্পানি আমলে ঢাকা বইতে উল্লেখ করেছেন, ষোড়শ শতকের মধ্যভাগে ঢাকায় পর্তুগিজরা বসতি স্থাপন করে। তেজগাঁও এলাকায় তারা কুঠি স্থাপন করে। তবে পর্তুগিজরা ঢাকায় কত কাল ব্যবসা-বাণিজ্য করেছে, তা স্পষ্ট নয়। ঐতিহাসিক মুনতাসীর মামুন ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ১৮৩২ সালে ঢাকায় পর্তুগিজদের বাড়ি ছিল ৪১টি। ইসলামপুর, শরাফতগঞ্জ ও নবাবপুরে ছিল তাদের বসবাস।
ইংরেজ
ব্রিটিশরা ভারতে এসেছিল ১৬০০ সালে। ঢাকায় তাদের উপস্থিতি সম্ভবত ১৬৫৮ সালের দিকে বলেই ঐতিহাসিকেরা মনে করেন। পর্তুগিজ ও ওলন্দাজদের পরে আসার কারণে ব্রিটিশরা তখন শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জায়গা পায়নি। তাদের প্রথম বাণিজ্যকুঠি স্থাপিত হয় শহরতলিতে, বর্তমানের তেজগাঁওয়ের খামারবাড়ি এলাকায়। টেলর উল্লেখ করেছেন, ঢাকায় ইংরেজদের ফ্যাক্টরি প্রথম স্থাপিত হয়েছিল ১৬৬৬ সালে। ব্রিটিশরা চেষ্টা করে সুবাদারের কাছাকাছি থাকতে। কয়েক বছরের মধ্যেই তারা বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে কুঠি স্থানান্তর করে এবং ১৬৭৮ সালে নবাবকে নানা উপঢৌকন দেওয়ার মধ্যমে বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অনুমতি লাভে সমর্থ হয়। মসলিন বস্ত্র ছিল তাদের প্রধান ব্যবসা। পরের ইতিহাস তো সবারই জানা। মুনতাসীর মামুন লিখেছেন, ‘দেওয়ানি লাভের পর আরও জাঁকিয়ে বসেছিলেন ইংরেজরা। তখন কুঠির আর প্রয়োজন ছিল না। কারণ পুরো দেশটাই ছিল তখন তাদের।’
গ্রিক
লবণ ও পাটের কারবার করে বেশ টাকাকড়ি করেছিল গ্রিকরা। ঐতিহাসিকদের মতে, ইউরোপীয়দের মধ্যে তারাই ঢাকায় এসেছিল সবার পরে। জেমস টেলর উল্লেখ করেছেন, কলকাতার গ্রিক সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা আরগিরি ঢাকায় বসবাস করতেন এবং ১৭৭৭ সালে তিনি পরলোকগমন করেন। তাঁর পরে অনেকেই আসে। মুনতাসীর মামুন উল্লেখ করেছেন, গ্রিকরা কবে এসেছিল, তা জানা যায় না। তবে ১৮৩২ সালে ঢাকায় ২১টি পরিবার ছিল। ঢাকায় তারা একটি গির্জাও স্থাপন করেছিল। ঢাকার গ্রিকরা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বিয়েশাদি করত। তবে তারা স্বল্পায়ু হতো। রেসকোর্সের পাশে ছিল তাদের কবরস্থান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে একটি গ্রিক কবর তাদের স্মৃতিবাহী। ঢাকা ছাড়া নারায়ণগঞ্জেও গ্রিকদের বসবাস ছিল। সেখানে ১৯৫৬ সালে র‌্যালি ব্রাদার্স নামের একটি পাটকল চালু করেছিল র‌্যালি ভাইয়েরা।
কাশ্মীরি
ঢাকায় যেসব কাশ্মীরি ধনে-মানে খ্যাতি ও প্রতিপত্তি অর্জন করেছিল, তাদের মধ্যে ঢাকার নবাব পরিবার অন্যতম। এই পরিবারের আদি পুরুষ আবদাল হাকিম নবাব আলীবর্দী খানের সময়ে প্রথমে বসতি স্থাপন করেছিলেন সিলেটে। পরে তাঁরা ঢাকায় আসেন। লবণ ও চামড়ার কারবারে প্রভূত ধনসম্পদ অর্জন করেন। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম ঐতিহাসিকের নোটবুক বইয়ে উল্লেখ করেছেন, আবদাল হাকিমের ভাই আব্দুল্লাহ সিলেট থেকে ব্যবসা গুটিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। তাঁর পুত্র হাফিজুল্লাহ আর্মেনীয়দের সঙ্গে যৌথ কারবার করে বিত্তবৈভব বাড়িয়ে তোলেন এবং ১৮১২ সালে বাকেরগঞ্জে জমিদারি ক্রয় করেন। নিঃসন্তান হাফিজুল্লাহর পর উত্তরাধিকারী হন তাঁর ভাই খাজা আলিমুল্লাহ। তাঁর পুত্র নবাব আবদুল গনি। ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে বংশপরম্পরায় নবাব উপাধি লাভ করেন। তাঁর পুত্র নবাব আহসানুল্লাহ এবং তাঁর পুত্র নবাব সলিমুল্লাহ। ঢাকায় বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুৎব্যবস্থা চালুসহ চিকিৎসা, শিক্ষাবিস্তার, সংস্কৃতির চর্চা ও নগর উন্নয়নে এই পরিবারের অবদান বিপুল। তাদের বংশধরেরা এখনো ঢাকায় বসবাস করছেন।
আর্মেনিয়ান
যেমন ফরাশগঞ্জ, তেমনি আরমানিটোলা এবং সেখানকার প্রাচীন গির্জা, পোগজ স্কুল, রূপলাল হাউস ঢাকায় আর্মেনীয়দের স্বর্ণযুগের সাক্ষী দেয়। ঢাকায় ঘোড়ার গাড়ি চালুর কৃতিত্বও তাদের। আর্মেনীয়দের সম্পর্কে বিস্তারিত আছে মুনতাসীর মামুনের হূদয় নাথের ঢাকা শহর বইয়ে। তিনি জানিয়েছেন, ‘আর্মেনীয়দের আগমনের সময় অজ্ঞাত। সম্ভবত সপ্তদশ শতক থেকেই তারা ঢাকায় আসতে শুরু করে। লবণ, পাট ও কাপড়ের ব্যবসায় তারা বিস্তর অর্থবিত্তের অধিকারী হয়। সামাজিক প্রভাবও বেড়েছিল। জমিদারিও কিনেছিল ভোলা, বরিশাল অঞ্চলে।’ উনিশ শতকের প্রভাবশালী আর্মেনীয় পরিবারগুলোর মধ্যে ছিল—পোগজ, আরাতুন, পানিয়াটি, কোজা মাইকেল, মানুক প্রভৃতি। ঢাকায় তারা বেশ কিছু সুরম্য হর্ম্য তৈরি করেছিল বসবাসের জন্য। রূপলাল হাউসের কথা আগেই বলা হয়েছে। বর্তমান বাফা ভবনটি ছিল নিকি পোগোজের বাড়ি। আরমানিটোলায় ছিল তাঁর কুঠি। আরমানিটোলার গির্জাটি নির্মিত হয়েছিল ১৭৮১ সালে। উনিশ শতকের শেষ দিকে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা দেখা দেয়। অনেকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চলে যায়।
চীনা ও অন্যান্য
চীনারা ঢাকায় জুতার ব্যবসায় বেশ অগ্রগতি লাভ করেছিল। মিটফোর্ড এলাকায় ছিল তাদের কারখানা। এ ছাড়া তারা লন্ড্রির ব্যবসায়ও নিয়োজিত ছিল।
ইরানিরা ঢাকায় আসে সপ্তদশ শতকে। ইরাকিরা এখানে এসেছিল প্রধানত দিল্লি থেকে। তারা মূলত শিয়া সম্প্রদায়ের। হোসেনি দালান ইমামবাড়াকেন্দ্রিক তাদের সম্প্রদায়ের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। ঢাকার বেনারসি কারিগরদের পূর্বপুরুষ এসেছিল ভারতের বেনারস থেকে। মিরপুরে তাদের প্রধান বসতি। তেলেগু সম্প্রদায়ের ঢাকা আগমন উনিশ শতকে। সায়েদাবাদ এলাকায় এখনো তাদের বংশধরদের বসবাস। রাজধানী হিসেবে ৪০০ বছরের মাইলফলক পেরিয়ে গেল এই শহর। আগের মতো ধনবল তার নেই বটে, তবে আছে জনবল। এই জনবল কি পারবে ঢাকার হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে?

গ্রন্থনাঃ আশীষ-উর-রহমান
সৌজন্যেঃ প্রথম আলো
PC : Rafiqul Islam Dulal.
Read More

Sunday, July 5, 2020

Ayman Sadiq and Queen’s Young Leaders Award

#আয়মানসাদিক  যে পুরুস্কারে ভিডিও দেখিয়ে বেশী জনপ্রিয় হয়েছে সেইটা কেন দেওয়া হয়েছে জেনে নিন।  #AymanSadiq

মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী

চেয়ারম্যান ও মহাপরিচালক, ঢাকা সেন্টার ফর দাওয়াহ এন্ড কালচার।


টি ছদ্মবেশে ইসলাম, মনুষ্যত্ব ও সংবিধান বিরোধী একটি যৌন নৈরাজ্য ছাত্র-ছাত্রী এবং তরুণ- তরুণীদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে।



 যে ছবিটা দেখছেন, তিনি ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের হাত থেকে ‘কুইন্স ইয়াং লিডারস অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশি তরুণ উদ্যোক্তা আয়মান সাদিক। (https://bit.ly/2BCWqbK)


 আয়মান সাদিককে চিনেন না এমন মানুষ খুব কমই আছেন। 
১০মিনিটস্কুল বা রবি১০মিনিটস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। (https://bit.ly/3dy7UdF)


 আয়মান সাদিককে তো চিনলেন কিন্তু 'কুইন্স ইয়াং লিডারস অ্যাওয়ার্ড' সম্পর্কে কিছু জানেন কি? বোধহয় জানেন না। আসুন জেনে নেই।




 ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সারা বিশ্বব্যাপী তরুণ উদ্যোক্তাদের পুরস্কৃত করেন যে সংস্থার মাধ্যমে সেটাই হলো কুইন্স ইয়াং লিডারস অ্যাওয়ার্ড সংস্থা। এই সংস্থার মূল কাজ হলো সারা বিশ্বব্যাপী তরুণ উদ্যোক্তাদের দিয়ে ডেমোক্রেটিক ব্লকের মূল ম্যাসেজ ছড়িয়ে দেয়া। ডেমোক্রেটিক ব্লক হলো আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটা অংশ। ধরে নেওয়া হয় সারা বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো দুটো রাজনীতিক দলে বিভক্ত হয়ে তাদের শক্তির চালনা করে। একটি হলো ডেমোক্রেটিক ব্লক, আরেকটি হলো রিপাবলিকান ব্লক। (https://bit.ly/2NrOBbg)

 ডেমোক্রেটিক ব্লকের মূল ম্যাসেজকে ইংরেজিতে সংক্ষেপে বলা হয় LGBT, এর পূর্ণরূপ হলো Lesbian, Gay, Bisexual, Transgender অর্থাৎ নারী সমকামি, পুরুষ সমকামি, উভকামি এবং হিজড়াদের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকে ডেমোক্রেটিক ব্লকের সদস্যরা। ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে এদের মূল ঘাটি। শক্তিধর এই দেশগুলো থেকে তারা তাদের কার্যক্রম সারা বিশ্বে পরিচালনা করে। যুক্তরাজ্য তথা ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেথ হলো ডেমোক্রেটিক ব্লকের অন্যতম সদস্য।




 এতক্ষণে বোধহয় বুঝেছেন যে ডেমোক্রেটিক ব্লক কারা আর কি তাদের উদ্দেশ্য। যদি এখনো বিষয়টা পরিষ্কার না হয় তাহলে আবারো সরাসরি বলছি, আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ডেমোক্রেটিক ব্লকের সদস্য। বারাক ওবামা ক্ষমতায় এসেই সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে সমকামিতার বৈধতা দিয়েছিল এবং সমকামিতার বৈধতাকে আমেরিকার বিজয়ও বলেছিল। এটা কেন করেছিল বুঝতে পারছেন না? (https://bit.ly/2NqAwuZ)


 আবার ফিরে আসি আয়মান সাদিকের কাছে। আয়মান সাদিক ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের থেকে যে কুইন্স ইয়াং লিডারস অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেছিল এটাই মূলত সমকামি সংস্থা। এই সংস্থা থেকে পুরস্কার নিতে গেলে প্রথম শর্ত হলো নিজেকে সমকামি হতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত হলো, তাদের সংস্থার হয়ে Lesbian, Gay, Bisexual, Transgender অর্থাৎ নারী সমকামি, পুরুষ সমকামি, উভকামি এবং হিজড়াদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যেতে হবে। তার প্রমাণ হলো, কুইন্স ইয়াং লিডারস অ্যাওয়ার্ড সংস্থা তাদের যাত্রা ২০১৪ সালে শুরু করলেও ২০১৫ সালেই প্রকাশ্যে নিউজিল্যান্ডীয় নারী টেব্বি বেসলেকে সমকামিতার পক্ষে উকালতি করার জন্য এবং সমকামিতার প্রতীক রংধনুর সাত রঙের হেয়ার স্টাইলের জন্য কুইন্স ইয়াং লিডারস অ্যাওয়ার্ড পুরস্কারে পুরষ্কৃত করা হয়েছিল। (https://bit.ly/2YxhLfNhttps://bit.ly/2YxYpXR)
 তাছাড়া বিভিন্ন বক্তৃতা, ভিডিও ও ছবি সাক্ষী আয়মান সাদিক ও তার গ্রুপের সাকিব বিন রাশিদ উভয়েই সমকামিতার অংশীদার এবং কৌশলে সমকামিতাকে প্রমোট করে যাচ্ছে। তাই আপাতত আমার, আপনার একটাই কাজ। তীব্র প্রতিবাদ করা এবং আয়মান সাদিক ও টেন মিনিট স্কুল বর্জন করা।

 এটাও জেনে রাখুন, সমকামিতাকে ইসলামে জেনা/পরকীয়া/ধর্ষণের মতই গর্হিত অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা যে মানুষকে ক্বওমে লূত আলাইহিস সালাম সম্প্রদায়ের মত সমকামিতায় নিয়োজিত পাবে সেই কুকর্মকারীকে এবং যার সাথে কুকর্ম করা হয়েছে তাকে মেরে ফেলবে।

(ইবনু মাজাহ ৩৫৬১, জামে আত তিরমিজি ১৪৫৬)



 তাই মুসলিম বিশ্বের ১৪টি দেশ সমকামিতার জন্য মৃত্যুদণ্ড জারি করেছে। এগুলো হল আফগানিস্তান, ব্রুনাই, ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সুদান, ইয়েমেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, এবং নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া ও ইরাকের কিছু অংশ। (https://bit.ly/3i1wqaF)

 এমনকি খোদ বাংলাদেশেও সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়৷ তবে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য কোনো অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না৷ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী, সমকামিতার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অন্য কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড, যা ১০ বছরও হতে পারে৷ এই আইনে একই সঙ্গে অর্থদণ্ডেরও বিধান আছে৷ তাছাড়াও জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল সমকামীদের মৃত্যুদণ্ড বিলোপের যে প্রস্তাব তুলেছিল, তার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ৷ (https://bit.ly/3i44tyK)


 সুতরাং সবাই প্রতিবাদের ঝড় তুলুন। আয়মান সাদিক ও ১০ মিনিট স্কুলের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হোক।




বিঃদ্রঃ মুসলমানের সন্তান তাদের কাছে শিক্ষা না নিলে তেমন কিছুই হবে না , নিজেদের অসচেতনতায় তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে বিকৃত মস্তিষ্ক ও পশুর চরিত্র যদি অর্জন করে, তাহলে একূল ওকূল মানে দদীন-ঈমান-চরিত্র আর পড়াশোনা দুকূলই যাবে।

সংগ্রহ ও গবেষণাঃ কওমী সাইবার টিম।

#BuckinghamPalace #London  #QueensYoungLeadersAward
Read More

Saturday, July 4, 2020

Prothom Alo - প্রথম আলো


ট্র্যান্সকম গ্রুপের  মালিক লতিফুর রহমানের বিষয়ে খুব একটা জানা নেই আমার, আমার ইচ্ছা, তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার।

এখন পর্যন্ত যতটুকু জানতে পেরেছি-

১) ট্রান্সকম প্রতিষ্ঠিত হয় আজ থেকে ১১৫ বছর আগে ১৮৮৫ সালে, একটি টি-প্ল্যানটেশন কোম্পানি হিসেবে। লতিফুর রহমান ট্র্যান্সকমের হাল ধরেন ১৯৭৩ সালে। স্বাভাবিকভাবে আমার মনে একটি প্রশ্ন জেগেছে, ১৮৮৫ সালে ট্রান্সকম কে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো ? ব্রিটিশরা ?? কারণ ঐ সময় টি কোম্পানিগুলো ব্রিটিশদেরই ছিলো। তারমানে লতিফুর রহমান কি ব্রিটিশদের থেকে ট্রান্সকম কিনেছিলো ?- এ বিষয়টি একটু জানা দরকার।
২) বাংলাদেশের মিডিয়াতে এনে মেয়েদের খারাপ করায় লতিফুরের একটা বিরাট ভূমিকা আছে। সেই তার মিডিয়া গ্রুপের পত্রিকা আনন্দধারার মাধ্যমে তা চালু করে। ১৯৮৭ সালে প্রথম আয়োজিত হয় ‘আনন্দ বিচিত্রা ফটো সুন্দরী ১৯৮৭’ প্রতিযোগীতা। পরবর্তীতে আনন্দ বিচিত্রার সাথে যুক্ত হয় লাক্স। নাম হয়- লাক্স আনন্দধারা সুন্দরী প্রতিযোগীতা। বর্তমানে মিডিয়াতে যত অভিনেত্রী-মডেল সবার আগমন লতিফুরের শুরু করা সেই প্রতিযোগীতা বা তার ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়েই।



৩) লতিফুরের প্রথমে পারিবারিক ব্যবসা ছিলো পাটের ব্যবসা। তাদের পারিবারিক জুট মিলের নাম ডব্লু রহমান জুট মিল। মিলটি সম্ভবত চাদপুরে অবস্থিত। মিলটি এক পর্যায়ে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রচুর দেনাগ্রস্ত হয়, শ্রমিকের বেতন না দিয়েই কারখানা বন্ধ করে দেয় লতিফুর। এ সময় লতিফুরের নামে কোর্টে অসংখ্য মামলা হয়।
৪) শোনা যায়, লতিফুরকে এ কঠিন অবস্থা রক্ষা করে তার স্ত্রী’র কাজিন অনুপ চেটিয়ার টাকা। অনুপ চেটিয়া হলো সন্ত্রাসী সংগঠন উলফার নেতা। অনুপ চেটিয়া ও লতিফুরের আর্থিক লেনদেনের গন্ডগোল থেকেই পরিবর্তীতে খুন হয় লতিফুরের মেয়ে শাজনীন তাসনিম রহমান।
৫) লতিফুর তার ব্যবসা দাড় করায় ইহুদী কোম্পানি নেসলের বাংলাদেশের ডিসট্রিবিউটর হয়ে। নেসলের দুধ বাংলাদেশে এসে বিক্রি করেই কোটিপতি হয়ে যায় লতিফুর। কিছুদিন আগে, বাংলাদেশের দেশীয় খামারীদের গরুর দুধের বিরুদ্ধে প্রথম আলোর অবস্থান বেশ লক্ষণীয় ছিলো। এর কারণ প্রথম আলোর মালিকের প্রথম ব্যবসা ছিলো বিদেশী গুড়া দুধ বাংলাদেশে আমদানি করা। বাংলাদেশের খামারীরা যদি দাড়িয়ে যায়, তবে তারা বিদেশ থেকে গুড়া দুধের আমদানির ব্যবসা করবে কিভাবে ?
৬) শুধু গুড়া দুধ নয়, লতিফুরের ব্যবসায় হচ্ছে বিদেশী কোম্পানির পণ্য বাংলাদেশে এনে ব্যবসা করা। নেসলে ছাড়াও পেপসি, সেভেন আপ, কেএফসি, পিজা হাটসহ শত শত বিদেশী কোম্পানির বাংলাদেশী পরিবেশক লতিফুরের ট্রান্সকম। এ কারণে আমার মনে হয়, প্রথম আলো সব সময় দেশী ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে। কারণ দেশীয় ব্র্যান্ড বা ব্যবসায়ীরা যদি দাড়িয়ে যায়, তখন তো বিদেশ কোম্পানির পণ্য দিয়ে দেশের মানুষের কাছে ব্যবসা করা যাবে না।
৭) লতিফুরের খারাপ কাজ আমার মনে হয়েছে, সে দৈনিক প্রথম আলোর দায়িত্ব দিয়েছে মতিউর রহমানকে, যে পাক্কা ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের (ডেমোক্র্যাটিক Ramon Magsaysay Award পুরষ্কার পাওয়া) এবং ডেইলি স্টারের দায়িত্বে রেখেছে মাহফুজ আনামকে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ পরিচালিত ইউএসজিএলসি-এনইডি-ইএফইএক্স নেটওয়ার্কের দৈনিক পত্রিকার পাবলিশারদের সংগঠন World Association of Newspapers and News Publishers International এর সদস্য। এ পত্রিকাগুলো দিয়ে হরদম ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের বিভিন্ন তত্ত্ব বাংলাদেশের মানুষকে খাওয়ানো হয়।
৮) ২০০৭ সালে ১/১১ এর সাথে লতিফুর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ডেমোক্র্যাটিকদের লক্ষ্য হলো- বাংলাদেশ থেকে মাইনাস টু করে সেখানে তাদের লোক বসানো। ঐ সময় খালেদা-হাসিনাকে বাদ দিয়ে হিলারির বন্ধু ইউনুসকে বসাতে বহু চেষ্টা করে লতিফুর ও তার পত্রিকা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার। যদিও তারা সে সময় সফল হয়নি।
৯) বিদেশী পণ্য বাংলাদেশে এনে ব্যবসা করার নাম করে প্রচুর পরিমাণে টাকা পাচার করে লতিফুর। এত দুর্নীতি করেও বড় বড় দুই মিডিয়া তার হাতে থাকায় কেউ তার বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস পায়নি। এমনকি ১/১১ এর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বড় বড় দুর্নীতিবাজ ধরা খেলেও রহস্যজনকভাবে লতিফুরের কিছু হয় না। উল্লেখ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে ছিলো ডেইলি স্টারের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সৈয়দ ফাহিম মোনায়েম।
১০) যমুনা ব্রীজ খোলার মাত্র ১০ বছরের মধ্যে বড় ফাটল দেখা দেয়। এর কারণ হিসেবে মনে করা হয় ট্রান্সকমের নিম্নমানের সিমেন্ট। যদিও ঐ সময় বিষয়টি নিয়ে কেউ লতিফুরকে দোষারোপ করার সাহস পর্যন্ত করেনি।
১১) আরেক ডেমোক্র্যাটিক ব্লক সদস্য ফজলে আবেদের ব্র্যাকের গভর্নিং বডির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো লতিফুর।
১২) আমার অ্যানালাইসিস বলে- লতিফুরের দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার হচ্ছে ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের বাংলাদেশের ঘাটি। বাংলাদেশে ডেমোক্র্যাটিক ব্লক কি কি পলিসি এপ্ল্যাই হবে তার নির্দেশনা বহু আগেই এ পত্রিকা দুটোতে দেয়া হয়। এদের নির্দেশনা নিয়েই পরবর্তীতে অন্যরা কাজ করে। বাংলাদেশে অন্য ডেমোক্র্যাটিক ব্লক সদস্যদের মধ্যে সমন্বয় করা এবং মিডিয়া সাপোর্ট দেয়া প্রথম আলো - ডেইলি স্টারের অন্যতম কাজ। লতিফুর ছিলো এদের সব অপকর্মের অন্যতম বাংলাদেশী পৃষ্ঠপোষক। তার মৃত্যুতে বিদেশী সম্রাজ্রবাদীরা সত্যিই এক মহান দালালকে হারালো।



------------------------------------------------------------------------


Reported By:  Vivid Productions Team 


Copyright ©2020. Vivid Productions Company Limited. All Rights Reserved

Trademark & Copyright Notice: ™ and © 2020 Vivid and its related entities. All rights reserved. Use of this Website (including any and all parts and components) constitutes your acceptance of these TERMS OF USE and PRIVACY POLICYAD CHOICES
Read More