Wednesday, September 8, 2021

বিশ্বের প্রযুক্তি খাতে ভারতীয়দের আধিপত্য !

 বিশ্বের প্রযুক্তি খাতে ভারতীয়দের আধিপত্য


বিশ্বের প্রযুক্তি খাতে ভারতীয়দের আধিপত্য বাড়ছে দিনকে দিন। গুগল ও মাইক্রোসফটের মতো বৃহৎ প্রযুক্তি জায়ান্ট পরিচালিত হচ্ছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) নেতৃত্বে। এ দুই মার্কিন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বহুজাতিক নানা প্রযুক্তি জায়ান্টের শীর্ষ পদে ভারতীয়দের উপস্থিতি বাড়ছে। মাইক্রোসফট, আইবিএম, অ্যাডোবের শীর্ষ পদেও আছেন ভারতীয়রা। বিশ্বের অন্যতম ১৬টি শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এখন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। এবার এঁদের ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।





⭕️
সুন্দর পিচাই
সুন্দর পিচাই। ভারতের হায়দরাবাদের এই পড়ুয়া এখন গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশনের সিইও। তিনি ২০১৯ সাল থেকে এ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ভারতের আইআইটির খড়গপুরের সাবেক শিক্ষার্থী এর আগে ২০১৪ সালের আগস্টে গুগলের প্রধান হন। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে সুন্দর পিচাই গুগলে কাজ করার সময়ে অ্যান্ড্রয়েড, ক্রোম, গুগল ম্যাপস নিয়ে কাজ করেছেন। আর এর সুফল পাচ্ছেন সবাই। সুন্দর পিচাই এমএস করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড থেকে। আর এমবিএ করেছেন একই দেশের ওয়ার্টন থেকে।


⭕️
সত্য নাদেলা
ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যর রাজধানী হায়দরাবাদে জন্ম সত্য নাদেলার। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাইক্রোসফটের সিইও হন তিনি। কয়েক দিন আগে তাঁকে মাইক্রোসফটের চেয়ারম্যানও করা হয়। এর আগে সংস্থার চেয়ারম্যান ছিলেন জন টমসন। সংস্থার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত, যেমন লিঙ্কডইন, নুয়্যান্স কমিউনিকেশনস, জেনিম্যাক্স ইত্যাদি অধিগ্রহণে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সত্য নাদেলার বাবা আইএএস অফিসার ছিলেন। মা সংস্কৃতের অধ্যাপক।
কর্ণাটকের মণিপল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে সত্য নাদেলা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি নেন। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান। ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে এমএস করেন ১৯৯০ সালে। দুই বছর সান মাইক্রোসিস্টেমসে কাজও করেন। ১৯৯২ সালে যোগ দেন মাইক্রোসফটে। এরপর ১৯৯৬ সালে ইউনিভার্সিটি অব চিকাগো থেকে এমবিএ করেন।


⭕️
শান্তনু নারায়ণ
মার্কিন কম্পিউটার সফটওয়্যার কোম্পানি অ্যাডোবি ইনকরপোরেশনের সিইও শান্তনু নারায়ণ। তিনি এর চেয়ারম্যান এবং প্রেসিডেন্ট। শান্তনু নারায়ণও দক্ষিণ ভারতের হায়দরাবাদের। ১৯৯৮ সালে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে অ্যাডোবিতে যোগ দেন। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) এবং ২০০৭ সালে সিইও হন অ্যাডোবির।
হায়দরাবাদের ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক করা শান্তনু ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন। এমএস করেন বউলিং গ্রিন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে। অ্যাডোবিতে যোগদানের আগে অ্যাপল ও সিলিকন গ্রাফিকস নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছিলেন।

⭕️
অরবিন্দ কৃষ্ণা
গত বছরের এপ্রিলে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনসের (আইবিএম) সিইও হিসেবে দায়িত্ব পান ভারতের অরবিন্দ কৃষ্ণা। ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে জন্ম নেওয়া অরবিন্দ ১৯৯০ সাল আইবিএমে চাকরি শুরু করেন। এরপর বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, কানপুর থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক শেষ করেন তিনি। এরপর ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন। আইবিএমে দীর্ঘ তিন দশকের চাকরিজীবনে একাধিক জ্যেষ্ঠ পদে কাজ করেন।


⭕️
রেভাতি অদ্বৈতী
বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ চুক্তিভিত্তিক ইলেকট্রনিকস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফ্লেক্স লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানের সিইও তিনি। ২০১৯ সালে ফ্লেক্সের সিইওর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ভারতের বিড়লা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স থেকে স্নাতক রেভাতি। এ ছাড়া থান্ডারবার্ড স্কুল অব গ্লোবাল ম্যানেজমেন্টে এমবিএ করেন।


⭕️
নিকেশ অরোরা
মার্কিন সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি পালো আলতো নেটওয়ার্কসের সিইও হিসেবে ২০১৮ সালে যোগ দেন নিকেশ অরোরা। এর আগে তিনি গুগল ও সফটব্যাংকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ সামলেছেন। নিকেশ অরোরা ভারতের বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন। এ ছাড়া তিনি নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ এবং বোস্টন কলেজ থেকে বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন।


⭕️
জয়শ্রী উল্লাল
মার্কিন কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং কোম্পানি অ্যারিস্টা নেটওয়ার্কসের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও জয়শ্রী উল্লাল। ২০০৮ সাল থেকে এ দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই নারী। ২০১৪ সালে তাঁর নেতৃত্বে নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয় অ্যারিস্টা নেটওয়ার্কস। জয়শ্রী সান ফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক এবং সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। অ্যারিস্টা নেটওয়ার্কসে যোগ দেওয়ার আগে সিসকো এবং অ্যাডভান্সড মাইক্রো ডিভাইসেসে (এএমডি) কাজ করেছিলেন তিনি।


⭕️
পরাগ আগারওয়াল
ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরাগ আগারওয়াল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বোম্বে থেকে স্নাতক করেন। ২০১১ সালে টুইটারের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তার (সিটিও) দায়িত্ব পান পরাগ আগারওয়াল। টুইটারে যোগ দেওয়ার আগে মাইক্রোসফট, এটিঅ্যান্ডটি এবং ইয়াহুর রিসার্চ টিমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন তিনি।


⭕️
অঞ্জলি সুদ
ভিডিও হোস্টিং, শেয়ারিং এবং সার্ভিসেস প্ল্যাটফর্ম ভেমিও একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানের সিইওর দায়িত্ব পালন করছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত অঞ্জলি সুদ। ওপেন ভিডিও প্ল্যাটফর্ম সেবাদাতা ভেমিওতে যোগ দেওয়ার আগে বৈশ্বিক ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন এবং টাইম ওয়ার্নারে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তিনি। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন অঞ্জলি।


⭕️
সঞ্জয় মেহরোত্রা
সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি মাইক্রোন টেকনোলজি ইনকরপোরেশন একটি মার্কিন কোম্পানি। এর সিইও সঞ্জয় মেহরোত্রা। মেমোরি চিপ নির্মাতা স্যানডিস্কের সহপ্রতিষ্ঠাতা এই ভারতীয়। এ ছাড়া ওয়েস্টার্ন ডিজিটালের বোর্ড সদস্য ছিলেন তিনি। স্যানডিস্ক প্রতিষ্ঠার আগে ইন্টিগ্রেটেড ডিভাইস টেকনোলজি এবং ইন্টেলের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করেন সঞ্জয়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেহরোত্রা ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলে থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন।


⭕️
জর্জ কুরিয়ান
২০১৫ সালে মার্কিন ক্লাউড ডাটা সার্ভিসেস এবং ডাটা ব্যবস্থাপনা কোম্পানি নেটঅ্যাপের সিইও এবং প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান ভারতীয় বংশোদ্ভূত জর্জ কুরিয়ান। নেটঅ্যাপে যোগ দেওয়ার আগে তিনি সিসকো সিস্টেমস, আকামাই টেকনোলজিস এবং ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানিতে কাজ করেন।
জর্জ কুরিয়ান আইআইটি মাদ্রাজে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে ছয় মাসের মধ্যে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। সেখান থেকে তিনি তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া তিনি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেন।


⭕️
অনিল ভুশ্রি
২০০৫ সালে পিপলসফটের প্রতিষ্ঠাতা ডেভ ডুফিল্ডকে সঙ্গে নিয়ে মার্কিন অন-ডিমান্ড ফিন্যান্সিয়াল ব্যবস্থাপনা এবং হিউম্যান ক্যাপিটাল ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার ‘ওয়ার্কডে’ প্রতিষ্ঠা করেন অনিল ভুশ্রি। ওয়ার্কডের সিইওর দায়িত্বে আছেন তিনি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এ টেক নির্বাহী ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন।


⭕️
স্টিভ সাংঘী
১৯৮৯ সালে স্টিভ সাংঘীর হাত ধরে যাত্রা শুরু মাইক্রোচিপ টেকনোলজি করপোরেশনের। এর দুই বছর পর ১৯৯১ সালে মাইক্রো-কন্ট্রোলার, মিক্সড-সিগন্যাল, অ্যানালগ এবং ফ্ল্যাশ-আপি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির সিইওর দায়িত্বে বসেন তিনি। ভারতের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেন পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে সাংঘী। ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর করেন।


⭕️
আমান ভুটানি
মার্কিন ডোমেইন নিবন্ধন ও ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি গোড্যাডির সিইওর দায়িত্ব ২০১৯ সালে পান আমান ভুটানি। গোড্যাডিতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি এক্সপেডিয়ায় একাধিক পদে কাজ করেন। এসভিপির ওয়ার্ল্ড ওয়াইডে প্রকৌশল বিভাগেও কাজ করেন তিনি। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করে ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন আমান।


⭕️
অনিরুদ্ধ দেবগান
বহুজাতিক সফটওয়্যার কোম্পানি ক্যাডেন্স ডিজাইন সিস্টেমসের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ২০১৮ সালে পান অনিরুদ্ধ দেবগান। ক্যাডেন্স ডিজাইনে যোগ দেওয়ার আগে ম্যাগমা ডিজাইন অটোমেশন এবং ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনসে (আইবিএম) দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন তিনি। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি দিল্লি থেকে স্নাতক করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন।


⭕️
শিবা শিবারাম
মার্কিন কম্পিউটার হার্ডডিস্ক ড্রাইভ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল। এই প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিবা শিবারাম। ওয়েস্টার্ন ডিজিটালে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ইন্টেল, ম্যাট্রিক্স সেমিকন্ডাক্টরস এবং স্যানডিস্কের একাধিক পদে দায়িত্বে ছিলেন। শিবারাম ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ত্রৈউচি থেকে স্নাতক ডিগ্রি এবং রেনসেলার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
Source: Gadgets Now & Prothom Alo
Read More

Tuesday, July 27, 2021

জামাল নজরুল ইসলাম - বিশ্বের বুকে বাংলার গর্ব

আপনি কি জানেন বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞানী সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, 'সে সেরা। আমি তার কাছে কিছুই না।'?

"সায়েন্স ওয়ার্ল্ড" নামে একটি বিজ্ঞান ম্যাগাজিন ২০০৭ সালে জামাল নজরুল ইসলামকে নিয়ে একটি ফিচার ছাপিয়েছিল। বাংলাদেশের কোনো ম্যাগাজিনে উনাকে নিয়ে লেখা এটিই ছিলো প্রথম ও শেষ ফিচার।

"কৃষ্ণবিবর" নামে উনার একটি বই আছে। অনেক খুঁজেও কোথাও সেই বইটি পেলাম না । শুধু এটাই নয়, "কৃষ্ণবিবর" "দ্য আল্টিমেট ফেইট অব ইউভার্স" "রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি" বইগুলো অক্সফোর্ড কেমব্রিজ আর হার্ভার্ড এর মত বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও ১০০ টারও বেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো পড়ানো হয়। কিন্তু যে দেশে তিনি জন্মেছিলেন, সেই বাংলাদেশের কোন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বই থেকে কোন লেকচার দেয়া হয় বলে আমার জানা নেই...






২০০১ সালে যখন পৃথিবী ধ্বংস হবার একটা গুজব উঠেছিল তখন জামাল নজরুল ইসলাম অংক কষে বলেছিলেন পৃথিবী তার কক্ষপথ থেকে ছুটে চলে যাবার কোনো সম্ভাবনা নেই।

স্টিফেন হকিং কে চিনে না এমন মানুষ খুব কম আছে। উনার লেখা "আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম" বইটি এক কোটি কপিরও বেশী বিক্রি হয়েছে সারাবিশ্বে । সে বইটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। কিন্তু এই বইটি প্রকাশের প্রায় ৫ বছর আগেই ১৯৮৩ সালে জামাল নজরুল ইসলাম "দ্যা আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স" বইটি লিখেছিলেন। দুটো বই-ই প্রায় একই সব টপিকের উপর লিখা। ব্লাকহোল, ওয়ার্ম হোল, সুপারনোভা, কসমিক রেডিয়েশন, প্যারালাল ইউনিভার্স, বাটারফ্লাই ইফেক্ট ইত্যাদি সব জোতিপদার্থর্বিজ্ঞানীয় ব্যাপারগুলোই ঘুরেফিরে দুটো বইতেই উঠে এসেছে। কিন্তু তুলনামূলক বিচারে জামাল নজরুল ইসলামের বইটিকেই বিশ্বখ্যাত বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকগন অধিক মূল্যায়ন করেছেন, যেটি প্রকাশিত হয়েছিল হকিং এর বইয়েরও প্রায় ৫ বছর পূর্বে।
অথচ হকিং এর বই নিয়ে যতটা না মাতামাতি সারাবিশ্বে হয়েছে, তার ছিঁটেফোঁটাও হয়নি জামাল নজরুল ইসলামের কোন বই নিয়ে.. কেনো? পরে বলছি।
বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের ৭ জন শ্রেষ্ট বিজ্ঞানীর নাম বলতে গেলে সে তালিকায় নাকি জামাল নজরুলের নামও চলে আসবে।

(Ashik ভাইয়ের পোস্ট থেকে তথ্য সংগৃহীত ও পরিমার্জিত করা হয়েছে)
বিশ্বের বুকে বাংলার গর্ব জামাল নজরুল ইসলাম

.
১৯৮১ সালে লন্ডনের লাখ টাকা বেতনের চাকরি এবং উন্নত সুযোগ-সুবিধা ছেড়ে মাত্র ৩ হাজার (২৮ শত) টাকা বেতনের চাকরি নিয়ে তিনি চলে আসেন মাতৃভূমি বাংলাদেশে। বাংলাদেশের বিজ্ঞান শিক্ষা এবং বিজ্ঞান গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তিনি। তাই সব সুযোগ সুবিধা ছেড়ে দেশে চলে এসেছিলেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। বন্ধুর সাথে হাঁটতে হাঁটতে জামাল স্যারকে নিয়ে কথা উঠে। ওর থেকেই জানতে পারলাম উনি কোনো মোবাইল ব্যবহার করতেন না। কারণ কি ছিলো জানেন?অন্য দেশের সিম কোম্পানি আমার দেশের টাকা নিয়ে যাবে একজন দেশপ্রেমিক হয়ে উনি এটা করতে পারেন না।

১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহে উনার জন্ম। জন্মস্থান ঝিনাইদহ হলেও তার শিকড়ের ঠিকানা চট্টগ্রামে। চাকরিসূত্রে বাবা ঝিনাইদহ থাকতেন।।সেখানেই জন্ম। বংশগত দিক থেকে ছিলেন অভিজাত পরিবারের সন্তান। তৎকালে ঢাকার নবাব বাড়ির পাশাপাশি যোগাযোগ ছিল জর্ডানের বাদশার পরিবারের সাথে। তাদের কলকাতার বাসায় কবি কাজী নজরুল ইসলামও যাতায়ত করতেন। কবির নামের সাথে মিল রেখেই তার বাবা-মা তার নাম রেখেছিলেন ‘জামাল নজরুল ইসলাম’।
বাবা মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম ছিলেন ঝিনাইদহ জেলার সাব জজ। মা রাহাত আরা বেগম ছিলেন একজন সাহিত্য অনুরাগী লেখক। গান ও গাইতেন বেশ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ' ডাকঘর 'নাটকটি উর্দুতে অনুবাদ করে বেশ প্রশংসা অর্জন করেছিলেন তিনি।
অধ্যাপক ইসলামের জীবনে তার মা ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। কিন্তু দুঃখের বিষয়, শিশু জামাল নজরুল ইসলামকে মাত্র ১০ বছর বয়সে রেখেই ১৯৪৯ সালে তিনি চলে যান পৃথিবী ছেড়ে।

শৈশবে কলকাতার একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন তিনি। সেখান থেকে চলে আসেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তির সময় তার মেধা দেখে অভিভূত হন প্রধান শিক্ষক। মেধায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ডাবল প্রমোশন দিয়ে তুলে দেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে। এখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে চলে যান পাকিস্তানের লরেন্স কলেজে। সেখান থেকে 'এ লেভেল, ও লেভেল' সম্পন্ন করে ভর্তি হন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএসসি সম্পন্ন করে চলে যান লন্ডনের বিশ্ববিখ্যাত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬৪ সালে 'এপ্লায়েড ম্যাথমেটিক্স এন্ড থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স' এর উপর পিএইচডি সম্পন্ন করেন তিনি।
মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি দুইবার বিএসসি করে ফেলেন( লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজে দ্বিতীয়বার বিএসসি করেছিলেন)। ছোটবেলায় যেমন ডাবল প্রমোশন পেয়ে সিক্সে উঠেছিলেন তেমনি পোস্ট ডক্টরাল করার সময়ও ডাবল প্রমোশন পেয়েছিলেন।
বিজ্ঞানে উঁচু মানের পারদর্শী হলে কিংবা খুব বড় ধরনের অবদান রাখলে ডক্টর অব সায়েন্স( ডিএসসি) প্রদান করা হয়। এ ধরনের ব্যাক্তিরা হলেন শিক্ষকদের শিক্ষক, সেরাদের সেরা। জামাল নজরুল ইসলামও ১৯৮২ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডিএসসি ডিগ্রিতে ভূষিত হয়েছিলেন।


চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠন বিশদ বাংলার এক সাক্ষাতকারে নিজের সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন--
"১৯৫৭ সালে আমি কলকাতা থেকে অনার্স শেষ করে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে গণিতশাস্ত্রে ট্রাইপাস করতে যাই। সাধারণত এটা ৩ বছরের কোর্স। তবে আমি দুই বছরেই শেষ করে ফেলি। ওখানে আমার সহপাঠী ছিলেন পরবর্তীতে ভারতের বিখ্যাত গণিতবিদ নারলিকার। আরেকজন ছিলেন ব্রায়ান জোসেফসন যে তার পিএইচডি থিসিসের জন্য মাত্র ৩৩ বছর বয়সে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পায়। আমার এক বছরের সিনিয়র ছিলেন জেমস মার্লি যিনি ১৯৬৬ সালে অর্থনীতিতে নোবেলা পান। ১৯৯৮ সালে রসায়নে নোবেল পান আমার শিক্ষক জন পোপল। আমি এগুলো বলছি সে সময় আমাদের লেখাপড়ার পরিমন্ডল কতটুকু ছিল তা বোঝানোর জন্য। আমার পিএইচডি থিসিস ছিল পার্টিকেল ফিজিক্সের উপর। এর ৩-৪ বছর পর আমি আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি নিয়ে কাজ শুরু করি। পরবর্তীকালে এর সাথে যুক্ত হয় কসমোলজি। বলতে পারেন এই তিনটিই হচ্ছে আমার আগ্রহ ও কাজের মূল ক্ষেত্র।
জামাল নজরুল ইসলাম বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে উল্লেখযোগ্য বই লিখেছেন ৬টি। এদের মাঝে ৩টি বই বিশ্ববিখ্যাত। ক্যামব্রিজ ও হার্ভার্ড সহ বেশ কয়েকটি নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বই পাঠ্য হিসেবে পড়ানো হয়। তার লেখা বই ‘দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স’ ফরাসি, জাপানী, পর্তুগিজ, ইতালিয়ান সহ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এরপর তার উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে Rotating fields in General relativity এবং An introduction to mathematical Cosmology.


বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণার জন্য লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি এক অনন্য নাম। এখানে গবেষণাপত্র প্রকাশ করা মানে আক্ষরিক অর্থে রাজকীয় কাজ সম্পন্ন করা। জামাল নজরুল ইসলাম এই প্রসিডিংসয়ে ধারাবাহিকভাবে ৬ টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন। এখানে গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে হলে রয়েল সোসাইটির কোনো ফেলো সদস্যের রিকমেন্ডেশন লাগে। উনার জন্য রিকমেন্ডেশন করেছিলেন উনার রুমমেট, বন্ধু, বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ও ফ্রেড হয়েল। এখানে গুরুত্বপূর্ণ ও উঁচু মানের গবেষণার জন্য ১৯৮২ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানজনক ডিগ্রি 'ডক্টর অব সায়েন্স' প্রদান করেন।
তিনি বাংলায় উল্লেখযোগ্য বই লিখেছেন 'কৃষনবিবর' 'মাতৃভাষা ও বিজ্ঞান চর্চা' 'অন্যান্য প্রবন্ধ' , 'শিল্প সাহিত্য ও সমাজ'।


‘দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স’ই তার প্রথম বই, যা ১৯৮৩ সালে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। ১৯৮১ সালের দিকে দেশে ফিরে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ সময় তার বেতন ছিল আটাশ শ’ টাকা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কিছুতেই রাজি হয়নি তাকে তিন হাজার টাকা বেতন দিতে। এই বেতনেই তিনি অধ্যাপনা করে যান। এখানে এক বছর অধ্যাপনা করার পর গবেষণার কাজে এবং পারিবারিক প্রয়োজনে আবার লন্ডনে ফিরে যাবার প্রয়োজন দেখা দেয় তার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণার জন্য বাইরে গেলে কর্তৃপক্ষ ছুটি প্রদান করে এবং ফিরে আসা পর্যন্ত চাকরি বলবৎ থাকে। এর জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটির আবেদন করেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দিচ্ছিল না। উপায় না দেখে চাকরি ছেড়ে চলে যান তিনি। দুই বছরে সেখানে তার গবেষণা সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৮৪ সালে তিনি সেখানকার বাড়ি-ঘর বিক্রি করে স্থায়ীভাবে দেশে চলে আসেন। এরপর অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বেতন বাড়িয়ে তিন হাজার টাকায় উন্নীত করে আর মাঝখানের সময়টিকে শিক্ষা ছুটি হিসেবে গ্রহণ করে।


দেশের মাটিতে তার ভোগান্তি এত অল্প ছিল না অবশ্যই। পরিস্থিতি কেমন নেতিবাচক ছিল সে সম্পর্কে একটু ধারণা পাওয়া যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এম হারুন অর রশিদের একটি লেখায়। অধ্যাপক ইসলামের মৃত্যুর পর তাকে স্মরণ করে কালি ও কলম নামের এক সাহিত্য ম্যাগাজিনে তিনি লিখেছেন-
জামালের সঙ্গে আমার সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠতা হয় ১৯৮৪ সালে, যখন তিনি কেমব্রিজ থেকে চট্টগ্রামে চলে আসার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। একদিন তিনি টেলিফোনে আমাকে লন্ডন থেকে জানালেন যে, তিনি বাংলাদেশে চলে আসতে চান। আমি বলেছিলাম, ‘এটা নিশ্চয়ই খুব ভালো সিদ্ধান্ত। তবে তিনি যদি তাঁর দরখাস্তটি অবিলম্বে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন, তাহলে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আলাপ করে যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দিতে পারি।’
তারপর তিনি যা বলেছিলেন তা আমি শুনতে মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি বললেন, তিনি ঢাকায় যাবেন না, তিনি চট্টগ্রামে যাবেন। কেননা সেখানে রয়েছে তাঁর পৈতৃক ভবন। আমি তাঁকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে, মনে হয় না, চট্টগ্রামে তিনি খুব ভালো ছাত্র পাবেন এবং হয়তো সেখানে তাঁর গবেষণাকর্ম ব্যাহতই হবে। কিন্তু তিনি সে-কথা মোটেই কানে তুললেন না। তাঁর কথা ছিল একটাই যে, আমি যেন তাঁর দরখাস্তটি নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে অবিলম্বে দেখা করি। আমি তাই করেছিলাম। এক সকালে ট্রেনে চট্টগ্রামের টিকিট কিনে চট্টগ্রাম পৌঁছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বলেছিলাম, ‘জামাল নজরুল ইসলাম এদেশের সম্পদ – তাঁকে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা আপনাদেরই সৌভাগ্য।’ উপাচার্য করিম সাহেব আমার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত হলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, জামাল নজরুল ইসলামের জন্য একটি অধ্যাপক পদ পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অবিলম্বে সৃষ্টি করে তাঁকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হবে।

দুঃখের বিষয়, ঢাকায় ফিরে এসে কয়েকদিন পরে খবর পেলাম যে কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পদ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না। তাই কিছুদিন পরে গণিত বিভাগেই একটি পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং তাও দ্বিতীয়বার আমার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ করার পর। যা হোক, শেষ পর্যন্ত সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং অকুণ্ঠ সহযোগিতা অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যোগদান করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার জন্য উন্নত মানের একটি গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর অধীনে অনেক শিক্ষার্থী মাস্টার্স ও পিএইচ.ডি. করেছে এবং তাদের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই।
একাধারে পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বিশ্বতত্ত্ববিদ ও অর্থনীতিবিদ জেএন ইসলাম সম্পর্কে বলতে গিয়ে হকিং বলেছিলেন, ‘জেএন ইসলাম আমার রুমমেট, বন্ধু এবং আমরা ছিলাম পরস্পর পরস্পরের শিক্ষক। জামাল নজরুল ইসলাম সেরা। আমি তার কাছে কিছুই না।


সারা বিশ্বে বিজ্ঞানী মহলে জেএন ইসলাম জিনিয়াস ইসলাম নামেও পরিচিত ছিলেন। জাপানি প্রফেসর মাসাহিতো বলেছেন, ‘ভারতের বিখ্যাত জ্যোতিপদার্থ বিজ্ঞানী জয়ন্ত নারলিকা জেএন ইসলামের সহপাঠী ছিলেন। ফ্রেডরিক হয়েল, নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ব্রায়ান জোসেফসন, স্টিফেন হকিং, প্রফেসর আব্দুস সালাম, রিচার্ড ফাইনমেন, অমর্ত্য সেন প্রমুখ ছিলেন জামাল নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাদের মুখে আমি অনেক বার জেএন ইসলামের কথা শুনেছি। জেএন ইসলামের ‘দি আল্টিমেট ফেইট অফ দি ইউনিভার্স’ লেখা হয়েছে ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে কিন্তু হকিংয়ের ‘অ্যা ব্রিফ হিস্টরি অব টাইম’ লেখা হয়েছে ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে। দুটি গ্রন্থ তুলনা করলে নিঃসন্দেহে জেএন ইসলামের বইটি যে কোনো বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ। কিন্তু ব্রিফ হিস্টরি অব টাইম নিয়ে আমরা যে তোলপাড় করেছি, জেএন ইসলামের আল্টিমেট ফেইট নিয়ে তার এক সহশ্রাংসও করিনি।
হকিং তাঁর মূল্যবান গবেষণা সময়ের অধিকাংশই ব্যয় করতেন বাঙালি প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তাদের সম্পর্ক ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব থেকে পারিবারিক বন্ধুত্বে উন্নীত হয়েছিল। হকিংয়ের জ্যেষ্ঠ ছেলে রবার্ট, কন্যা লুসি এবং কনিষ্ঠ ছেলে থিমোতি জামাল নজরুল ইসলামের সঙ্গ খুব পছন্দ করতেন। জামাল নজরুল ইসলামের দুই মেয়ে সাদাফ যাস সিদ্দিকি ও নার্গিস ইসলাম ছিলেন তাদের খুব আদরের। সাদাফ যাসের আমন্ত্রণে লুসি ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে লিট ফিস্টে যোগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ এসেছিলেন। অর্থশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অমর্ত্য সেন ছিলেন জামাল নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে এলে বন্ধু জামাল নজরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করার জন্য চট্টগ্রাম চলে গিয়েছিলেন। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী আবদুস সালাম বাংলাদেশে এলে বিমান বন্দরে নেমে বলেছিলেন, জেএন ইসলামকে খবর দিন। ওই সফরে জেএন ইসলামকে একটা পদকও দিয়েছিলেন প্রফেসর আবদুস সালাম। উল্লেখ্য, বয়সে জামাল নজরুল ইসলাম ছিলেন হকিংয়ের সিনিয়র কিন্তু আবদুস সালাম এবং অমর্ত্য সেনের জুনিয়র।


জেএন ইসলামের লেখা এবং ক্যাম্ব্রিজ থেকে প্রকাশিত ‘রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি’ বইটাকে বলা হয় আধুনিক বিজ্ঞানের একটি অদ্বিতীয় বই। সেটা নিয়ে অধিকাংশ বাঙালি কিছুই জানে না। নিজের ঘরের মানুষের কৃতিত্বের খবর যদি ঘরের মানুষ না রাখে তাহলে বাইরের লোকে রাখবে কেন? জেএন ইসলামের ‘দি আল্টিমেট ফেইট অফ দি ইউনিভার্স’ ছাড়া আর কোনো বাঙালির বই হিব্রু ভাষায় অনূদিত হয়নি।


জামাল নজরুল ইসলাম ছিলেন আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক। নিজের আয় থেকে অর্থ জমিয়ে দরিদ্র ছাত্রদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছেন। ১৯৭১ সালে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ বন্ধের উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন। সর্বোপরি, বিদেশে সহস্র পাউন্ডের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দিয়ে জামাল নজরুল ইসলাম বাংলাদেশে চলে এসেছিলেন। শুধু তাই নয়, মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশে ফেরার আগে জামাল নজরুল ইসলামের পরামর্শ চাইলে তিনি, জাফর ইকবালকে দ্রুত দেশে ফেরার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছিলেন।
দেশের জন্য, দেশের বিজ্ঞানচর্চার জন্য তিনি যে পরিমাণ আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, তা সত্যিই অনন্য।নিভৃতচারী ও প্রচারবিমুখ এই গুণী বিজ্ঞানী ২০১৩ সালে ৭৪ বছর বয়সে পরলোকগত হন।


তথ্যসূত্রঃ গুগল, দেশি বিদেশী ম্যাগাজিন, প্রথম আলো, ফেইসবুক,
জহিরুল হক জাবেদ
Read More

Tuesday, June 22, 2021

Iss Pyaar Ko Kya Naam Doon?

Barun Sobti and Sanaya Irani starred romantic drama television series - Iss Pyaar Ko Kya Naam Doon? complete 10 years on 6 June 21

No of episodes 406*



------1 The story revolves around a business tycoon, Arnav Singh Raizada, and a middle-class girl from Lucknow, Khushi Kumari Gupta. Khushi is adopted because her parents had died in a car crash when she was young, Anjali's husband Shyam, stalking Khushi from Lucknow, reaches her place to live as a paying guest. He poses as a bachelor wanting to get engaged to her when he is married to Anjali. Khushi asks Shyam to help her get a job, and she reaches ASR (Arnav Singh Raizada) office, which Arnav handles. They meet again, Khushi and her sister decide to go back to Lucknow. But in the middle of the way,  they decide to go back and open a sweet shop. She eventually runs into Arnav again when she made sweets for his sister Anjali's wedding anniversary. 

Episode 1-12


Episode 12-90

---- 2 At Raizada house, Anjali wants Khushi to groom Lavanya,  Arnav slowly realises he is in love with Khushi, and Khushi also discovers she loves Arnav, much to the irritation of Shyam, Lavanya realises that Arnav likes Khushi and decides to leave just before their engagement. On the day of their wedding, Arnav discovers Shyam pleading with Khushi to marry him and mis-interprets the situation. To save his now pregnant sister's marital life, he blackmails Khushi, keeping Payal's wedding at stake. Arnav asks Khushi to marry him for six months (a contract marriage). To save Payal's wedding, Khushi marries him.


Episode 91-300

------ 3 Khushi and Arnav have a love-hate relationship in their marital life, constantly bickering and caring for each other, Shyam, greedy for the Raizada estate and industries, plans to murder Arnav and arranges his abduction. Still, Khushi manages to rescue him with the help of his NRI cousin (Nandkishore or NK). Arnav comes home, exposes Shyam and throws him out. This causes Anjali to fall into depression. Nani advises Khushi to stay away from Anjali for some time to heal herself as Anjali thinks that Khushi is the reason for her separation from her husband.


Arnav and Khushi get married in a beautiful ceremony. On their first night, they both discover secret cameras hidden in their room which they found to be plotted by Shyam. They further discover that Shyam is responsible for Anjali's miscarriage and trauma and find proof of it. They expose Shyam together, and Anjali finally throws Shyam out of the house.


Episode 301-406

---4   As Khushi and Arnav's relationships get better, Arnav's college friend and ex-girlfriend Sheetal drops in with Aarav. She adopts Aarav from an ashram and plans her way into Khushi's life. She makes Aarav behave like Arnav and lets Khushi believe Aarav is Arnav's "son" to inherit Arnav's property. Arnav exposes her, and they adopt Aarav. Aakash and Payal moved to the USA on his father orders for Business purposes. Khushi later runs for a beauty pageant for married women to have an identity other than Arnav's wife and, with Arnav's motivation, wins it.


Read More

Monday, May 31, 2021

ছাগলের ভ্যাকসিন

 



অনেকে জিজ্ঞাসা করেছেন আপনি ছাগলের কি কি ভ্যাকসিন দেন ।


ছাগলের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পি পি আর আর ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয় এবং ছাগলের খামার ধ্বংস করে দেয় । আমি এ দুটিই দিয়ে থাকি এছাড়া আরও অন্যান্য ভ্যাকসিন দিতে হয়। সেগুলি নিম্নে। তবে প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যে কোন রোগের জন্য লক্ষনের উপর হেমিও ঔষধ ব্যবহার করি । টি টি নাসের ক্ষেত্রেও । ভাল ফলও পায়।
#চলুন জেনে নিই ছাগলের ভ্যাকসিন সম্বন্ধেঃ

#রোগের নাম টিকার নাম, ডোজ ও প্রয়োগ পদ্ধতি ও বুস্টার ডোজঃ

#পি.পি.আর রোগঃ= পি.পি.আর টিকা ১ মিলি বা সিসি করে চামড়ার নিচে ইনজেকশন ১ বছর পরপর ৪ মাস বয়সে এ টিকা দিতে হয়। তবে, ছাগলের বাচ্চার বয়স ২ মাস হলেই এ টীকা দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে ৬ মাস পর বুস্টার ডোজ দিতে হবে। এর পর থেকে বছরে এক বার করে দিতে হবে।
#ক্ষুরা রোগ বাঃ- রোগের নামঃ ক্ষুরা রোগ বা এফ.এম.ডি
#টিকার নামঃ ক্ষুরা রোগ টিকা
#প্রদাহের স্থানঃ চামড়ার নিচে
#মাত্রাঃমনোভ্যলেন্টঃ ১ সিসি ,বাইভ্যালেন্টঃ ২ সিসি, ট্রাইভ্যালেন্টঃ ৩ সিসি
সর্তকতাঃ ৪ মাস বয়স থেকে শুরু করে যেকোন বয়সের ছাগলকে এমনকি গর্ভবতী ছাগলকে দেওয়া যাবে।
#গোট পক্সঃ- • টিকার নামঃ গোট পক্স ভ্যাকসিন
#রোগের নামঃ গোট পক্স বা ছাগলের বসন্ত রোগ
#প্রদাহের স্থানঃ চামড়ার নিচে
#মাত্রাঃ ছাগল – ১ সিসি
#ইমিউনিটিঃ ১ বৎসর। প্রথম বার ভ্যাকসিন দেবার পর বছরে ১ বার করে দিতে হবে।
সর্তকতাঃ ৬ মাস বয়স হলেই ছাগলকে এ টিকা দেয়া যাবে। প্রথম বার ভ্যাকসিন দেবার পর বছরে ১ বার করে দিতে হবে।
#টিকার নামঃ এ্যানথাক্স বা তড়কা টিকা
#রোগের নামঃ তড়কা
#প্রদাহের স্থানঃ ঘারের চামড়ার নিচে
#মাত্রাঃ ছাগল – ০.৫ সিসি
#ইমিউনিটিঃ ১ বৎসর। প্রথম বার ভ্যাকসিন দেবার পর বছরে ১ বার করে দিতে হবে।
সর্তকতাঃ ছাগলের বয়স ২ মাস বয়সের বেশি হলে দেওয়া যাবে এবং প্যাগনেন্ট ছাগলকে দিবেন না।
#টিটেনাস/লক জ্বঃ-টিকা টি.টি-টিটেনাস টক্সাইড ০.৫ মিঃলিঃ ত্বকের নিচে বা মাংসপেশীতে ।
জন্মের পর থেকে দেওয়া যায়। #ইমিউনিটিঃ ১ বৎসর।

বি দ্রঃ-টিটেনাসে আক্রান্ত হলে এটা দেওয়া যাবেনা।তখন অব্যশই এন্টি টিটেসাস সিরাম রেজিঃ ডাক্তারের পরামর্শশ অনুযায়ি দিতে হবে।

চলবে সঙ্গে থাকুন করে ফেলুন আপনার জিজ্ঞাসা।
Read More

ইসরাইল কি যুদ্ধে হেরে গেল

 


বোধোদয়য় না নয়া ফন্দি ফিকির?
***************************
জার্মান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নামিবিয়ায় ঔপনিবেশিক শাসনের সময় চালানো গণহত্যার দায় স্বীকার করে উত্তসুরিদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। ঐ অপরাধের সময়কার ক্ষতিপূরণ দিতেও রাজী হয়েছে। জার্মান দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা নামের দেশটিতে ১৯০৪ সালে গড়ে উঠা বিদ্রোহ দমনে জার্মানি যে তান্ডব চালায় তাকে বিংশ শতাব্দীর ‘বিস্মৃত গণহত্যা’ বলে উল্লেখ করেন ঐতিহাসিকরা। কত মানুষের প্রাণ গিয়েছিল তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই, তবে তা হাজার হাজার। সে সময় প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল নামা এবং হেরেরো নামের দুই আদিবাসী জনগোষ্ঠী। “জার্মানি তাদের ঐতিহাসিক এবং নৈতিক দায় স্বীকার করছে এবং নামিবিয়ার জনগণ এবং অপরাধের শিকার মানুষদের উত্তরসূরিদের কাছে ক্ষমা চাইছে”- জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস। ১৩৪ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে রাজী হয়েছে জার্মানি। এই টাকা নামিবিয়ার শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে খরচ করা হবে। অবশ্য আগামি ৩০ বছর ধরে এই টাকা দেয়া হবে। হেরেরো আদিবাসী গোষ্ঠীর প্রধান ভেকুই রুকোরো এর বিরোধীতা করে বলেন-“নামিবিয়ার সরকার আরেকবার দেশের স্বার্থ বিক্রি করে দিয়েছে”।


ফ্রান্স অকস্মাৎ সাবেক উপনিবেশ রোয়ান্ডায় ১৯৯৪ সালে ভয়াবহ গণহত্যার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে। রাজধানী কিগালিতে গণহত্যার স্মরণে নির্মিত যে সমাধিস্থলে গণহত্যার নিহত ২৫০,০০০ টুটসিকে কবর দেয়া হয়েছিল, সেখানে গিয়ে ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ইমানুল ম্যাক্রঁ বলেন - “আমাদের দায় স্বীকার করতে আমি এখানে হাজির হয়েছি... আমাদের ক্ষমা করে দিন”। ১৯৯৪ সালে রোয়ান্ডার যে গৃহযুদ্ধে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল- যাদের সিংহভাগই টুটসি জাতিগোষ্ঠীর। সে সময়কার সরকার সমর্থিত যে হুতু মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে গণহত্যা চালানোর জন্য দায়ী করা হয় তাদেরকে অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করেছিল ফ্রান্স। প্রায় ১০০ দিন ধরে চলা ঐ হত্যাকাণ্ডে বাড়ী বাড়ী ঢুকে, উপসনালয়ে ঢুকে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। স্কুলে ঢুকে শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। ‘সেফ জোন‘ তৈরি করতে ফ্রান্স সৈন্য মোতায়েন করেছিল এবং ঐ সেফ জোন দিয়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া হুতু মিলিশিয়ারা প্রতিবেশী জায়ারে পালিয়ে গিয়েছিল। ১৯৯৪ সালের লড়াই জিতে Rwandan Patriotic Front এর নেতা Paul Kagame ক্ষমতা নেওয়ার পর ফ্রান্সের সাথে সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। সমস্ত ফরাসি প্রতিষ্ঠান - স্কুল, সাংস্কৃতিক সংগঠন - বন্ধ করে ফরাসির বদলে ইংরেজিতে পাঠদান শুরু হয়। এরপর ব্রিটিশ উপনিবেশ না হয়েও রোয়ান্ডা কমনওয়েলথের সদস্য হয়।
অবশ্য বেলজিয়ামের রাজা দ্বিতীয় লিওপল্ড ১৮৬৫ সালে মধ্য আফ্রিকায় বিশাল একটি এলাকা দখল করে ঔপনিবেশিক শাসন চালু করে যে এক কোটি মানুষকে হত্যা করেছিল – তার জন্য এখন পর্যন্ত তার দায় স্বীকার বা ক্ষমা চায়নি। গত বছর বেলজিয়ামের রাজা “গভীর অনুশোচনা” জানালেও সরকার কখনো তাদের বিতর্কিত অতীত নিয়ে কথা বলেনি। রাজা লিওপল্ড “সভ্যতার আলো” হাতে করে গিয়ে ২০ লাখ বর্গ কিলোমিটার জায়গায় ব্যাক্তিগত উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে নাম দেয় কঙ্গো ফ্রী ষ্টেট। লিওপল্ড জোরপূর্বক শ্রম ব্যবহার করে রাবার চাষ, হাতির দাঁত এবং নানা খনিজ দ্রব্যের ব্যবসা করতে গিয়ে অবাধ্যতার শাস্তি মৃত্যু কিংবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলার বিধান চালু করে। মানুষকে দাস এবং শিশুদের ধরে শিশু কলোনিতে আবদ্ধ করে সেনা প্রশিক্ষন দেওয়া হত যেখানে প্রায় ৫০% শিশু মারা যেত। নির্যাতন, রোগ শোকে এক কোটি লোকের মৃত্যু হয় তখন। জাতিসংঘের একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ কঙ্গোতে হত্যা-নির্যাতনের জন্য বেলজিয়াম রাষ্ট্রকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু ব্রাসেলস এখনও চুপ।
-শোনেন গুরু, অনেক প্রশ্নের উত্তর সঠিক হলেও ফলাফল শুন্য হয়ে যায়। যেমন শিক্ষক ক্লাসে জিজ্ঞেস করলেন
-বলতো, নেপোলিয়ান কোন যুদ্ধে মারা যান?
-জীবনের শেষ যুদ্ধে, স্যার।
-ভারতের স্বাধীনতা চুক্তি কোথায় সই হয়েছিল?
-চুক্তি পত্রের একেবারে নিচে।
-বিবাহ্‌-বিচ্ছেদ কি কারনে ঘটতে পারে?
-শুধু বিবাহ্‌ করার কারনে।
-একজন মানুষ কিভাবে ৭দিন না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে পারে?
-একদম সোজা স্যার, ৭ রাত ঘুমিয়ে।


ইসরাইল কি যুদ্ধে হেরে গেল?
*****************************
ইহুদী, খ্রিস্টান এবং মুসলিম জাতীর পিতা ইব্রাহিম (আঃ) থেকে আমাদের কাছে ধর্ম পৌঁচেছে। সবই আব্রাহামিক রিলিজিয়ন নামে পরিচিত। ইহুদি এবং মুসলমানদের মধ্যে মৌল নীতিতে অনেকাংশে মিল পাওয়া যায়। ১৪০০ বছর ধরে চলে আসা পাশাপাশি দুটি ধর্মের কালচার, ফিলোসফি কিংবা তাত্ত্বিক অমিল বেশি চোখে পড়ে না। প্রথম ইসলামিক ওয়াক্‌ফ বা চ্যারিটেবল কাজ শুরু হয় রাব্বি মুখাইরিকের দানে। রাব্বি মুখাইরিক মুহাম্মদ (সঃ) এর সাথে ওহুদের যুদ্ধে যোগদান করেন। সে সময় মদিনায় অনেক ইহুদি বাস করতেন এবং মুসলমানদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বহিঃশ্ত্রুর সাথে যুদ্ধ করেছেন। ১০২৭ সালে ইহুদি স্যামুয়েল ইবনে নাঘরিল্লাহ মুসলিম আমিরাত আল আন্দালুস এর মিলিটারি জেনারেল নিযুক্ত হয়েছিলেন। মুসলমানদের সাথে তাদের কোন সংঘাত হয়নি। ইহুদিদের নবী মোসেস’কে মুসলমানেরা নবী হিসাবে ভক্তি করে। পবিত্র কোরআনে প্রায় ৪৩ জায়গায় মুসা এবং বনি ইসরাইলের কথা উল্লাখ আছে।

পরবর্তিতে ইহুদিদের কেউ স্বেচ্ছায় ইসলামে কনভার্ট হলে তাকে প্রতারণা এবং ধর্ম বিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করে মৌলবাদীরা। একজন ইহুদি মনে করে অন্য ধর্মে কনভার্ট হওয়ার চেয়ে নিজে জীবন শেষ করে দেওয়া উত্তম। আর মুসলমানেরা ইহুদি সহ অন্য ধর্মের লোককে ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য দাওয়াত দেওয়াকে পুন্যের কাজ মনে করে। অনেক বিখ্যাত ইহুদি ইসলাম গ্রহন করে মুসলমানদের শ্রদ্ধা কুড়িয়েছেন, যেমন হাঙ্গেরীর সাংবাদিক Leopold Weiss মোহাম্মদ আসাদ নামে ইংরেজিতে কোরানের অনুবাদ করেন The Message of the Qua’ran । ইজিপ্টের কম্যুনিস্ট নেতা Marc Schleifer, আরব বিশ্বের বিখ্যাত গায়িকা এবং অভিনেত্রী Layla Morad, পাকিস্তানের লেখিকা Margret Marcus যিনি ইসলামের কালচার এবং ইতিহাসের উপর ৩০ খানার বেশি বই লিখেন মারিয়ম জামিলা নামে। অনেকে ধর্মান্তরিত হবার পরও তাদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি এবং ইহুদিদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ধরে রাখার চেস্টা করেছেন।


১৪৯২ সালে Askia Muhammed পশ্চিম আফ্রিকার টিমবুকটু সম্রাজের ক্ষমতা দখল করে সেখানে বসবাসরত ইহুদিদের উপর ডিক্রি জারি করে – হয় মুসলমান হয়ে যাও নইলে এই রাজ্য ত্যাগ কর। তখন অনেকে বাধ্য হয় ইসলামে ধর্মান্তারিত হতে। প্রথম ইহুদি-মুসলিম বিরোধ তৈরী হয়। ১৬ এবং ১৭ শতকে ইরানের Safavid dynastyর সময় ইহুদিদের প্রকাশ্যে ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘোষনা দিতে হত। পরে ফরমান জারি করে ‘বল প্রয়োগ ধর্মান্তরিত’ বন্ধ করলে তারা আবার আগের ধর্মে ফিরে যায়। ১৭ শতকে ইয়েমেনের বাদশা ইহুদিরা ধর্মান্তারিত না হলে সমস্ত শহর থেকে তাদের বের করে দেবার আদেশ দেয় যা ইতিহাসে Mawza Exile নামে পরিচিত। ১৮৩৯ সালে ইহুদিরা রাশিয়া এবং ইরান, তুরস্ক, উজবেকিস্থানে অত্যাচারিত হয়ে ইসলাম গ্রহনে বাধ্য হলেও তারা গোপনে ইহুদিবাদ চর্চা করতে থাকে সেই সাথে তাদের ক্রোধ পুঞ্জিভূত হতে থাকে। বর্তমানে ইরানে ইহুদিদের জোরাস্টারিয়ান্দের মত religious minority group হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং পার্লামেন্টে একটি সীট রাখা হয়েছে। তবে তাদের দেশের বাইরে ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা আছে, কোন পরিবারের সকল সদস্য মিলে একসাথে বিদেশ ভ্রমন করতে পারবে না।


দেখা যাচ্ছে কোরআনে বর্নিত ‘আব্রাহামিক রিলিজিয়ন’ এর আদর্শ থেকে মুসলমানরা সরে এসে হাদিস, ফেকাহ্‌ অনুসরন করতে গিয়ে ইহুদিদের শ্ত্রু বানিয়ে ফেলেছে। সাথে বৃটিশদের ‘কুট কৌশল’ ১৯৪৮ এ ইসরাইল রাস্ট্র ঘোষনা মিডল ইস্টে স্থায়ী যুদ্ধ বাঁধিয়ে রেখেছে। মুসলমানদের দিনে ৫ বার সালাত আদায়ের মত ইহুদি’রা দিনে দুই থেকে পাঁচবার প্রার্থনা করে। একই রকম রোজা, দুর্বলকে অর্থদান, হালাল খাবারের নিয়মে মুসলমানদের সাথে মিল আছে। শুকুরের মাংস উভয় সম্প্রদায়ের জন্য হারাম। সমকামীতা, বিবাহ্‌ বহির্ভুত সেক্স, স্ত্রীর সাথে মাসিক কালিন সেক্স করা উভয়ের জন্য হারাম। তা ছাড়া উভয় সম্প্রদায়ের পুরুষেরা খৎনা করে থাকে।


নবীজীর সময় চুক্তি ভঙ্গের দায়ে বনু কোরাইজা গোত্রের কিছু ইহুদিকে হত্যা করা হয়। কট্টরপন্থী কিছু মুসলমান সেই উদাহরণ টেনে এনে ইহুদি হত্যার মাধ্যমে বর্তমানের সহিংসতাকে জিইয়ায়ে রাখতে চায়। মনে রাখা উচিৎ সে সময় ইসলামিক আইন তৈরী হয় নি, ইহুদিদের প্রচলিত আইনেই নবীজী তাদের বিচার করেছিলেন। খায়বরের যুদ্ধে সাফিয়ার স্বামী এবং বাবা মারা গেলে অসহায় নারীকে নবীজী নিজে বিয়ে করেছেন। সেই সম্প্রীতি নষ্ট হয়ে গেছে উভয় সম্প্রদায়ের কিছু লোকের ভুলের কারনে।

প্রথম শতাব্দীতে রোম সম্রাট জেরুজালেম এবং সেখানকার সমস্ত টেম্পল ধ্বংস করে খ্রীস্টান ধর্মের বীজ বপন করে। ইহুদীদের এক ইশ্বরের বিশ্বাসের পরিবর্তে খৃস্ট ধর্মের Triune God বা ত্রিতত্ববাদ দুই ধর্মের মধ্যে সংঘাত ডেকে আনে। God in human form ইহুদিরা মেনে নিতে পারেনি। তাই তাদের উপর নানান অত্যাচার নেমে আসে। মধ্য যুগে ক্যাথলিক চার্চ ডিক্রি জারী করে ইহুদিদের হত্যা, জোর করে খৃষ্টান ধর্ম পালনে বাধ্য করা, তাদের ধন সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া বন্দ করে। ১৫ শতকে খ্রিস্টীয় চার্চ পুনরায় তাদের উপর নতুন করে কিছু বাঁধা নিষেধ আরোপ করে। যেমন ইহুদি – খৃস্টানদের মধ্যে বিবাহ্‌ নিষিদ্ধ করা হয়, একসাথে বসে খাওয়া নিষিদ্ধ, ইহুদিরা কোন পাবলিক অফিসে আসতে পারবে না ইত্যাদি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানীর হলোকাস্ট, ইহুদী-খৃস্টানের মধ্যে সম্পর্কের নতুন সমীকরণ হয়ে যায়। ২০১৫ সালে ভ্যাটিকান এক সার্কুলার জারী করে – “ইহুদিদের পরিত্রান পাওয়ার জন্য ধর্মান্তারিত হবার দরকার নাই, ইহুদী বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে ইহুদি খৃস্টান একসাথে জোট বেঁধে লড়াই করতে হবে”। এখানে পরিস্কার করে বোঝা যায় ইহুদী বিরোধী বলতে মুসলমানদের কথা বলা হয়েছে।

চলমান সংঘাত চলা কালীন উভয় পক্ষের প্রচুর ক্ষয় ক্ষতির পর জর্ডানের বাদশাহ্‌ এবং কাতারের আমির হামাসের সাথে আলোচনা করে যুদ্ধ বিরতি করতে রাজি করেন। জর্ডানের সমস্ত উপজাতি নেতারা এবার পবিত্র কোরান ছুঁইয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে তারা বর্ডার ক্রস করে দখলকৃত প্যালেস্টাইনে প্রবেশ করবে। ১০ থেকে ১৫ লক্ষ যুবক হালকা এবং মাঝারি রকম অস্ত্র নিয়ে নিজেদের জীবন কোরবানি করতে প্রস্তুত ছিল। সেই সাথে ইরাকের মোজাহীদরা আশ্বস্ত করেছিল এই বলে যে প্রায় ২০ লক্ষ যুবক জেরুজালেম মুক্ত করতে তাদের সাথে যুক্ত হতে প্রস্তুত আছে। উপজাতী নেতারা জর্ডানের বাদশাহকে কমান্ডার হিসাবে যুদ্ধ পরিচালনার ভার দিতে চেয়েছিল। এই খবর জর্ডানের ইন্টেলিজেন্টের মাধ্যমে মোসাদের কাছে পোঁছে যায়। ওদিকে ইজিপ্টের রাস্তায় মানুষ নেমে আসে প্যলেস্টানিদের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে। ইসরাইল আর্মি পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরে যে জেনারেল এতক্ষন সীজ ফায়ারের বিরুদ্ধে ছিল, সে ভড়্‌কে গিয়ে নেতানিয়াহুকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে। একই সাথে আমেরিকা নেতানিয়াহুকে জানাই যে পাকিস্তানি এয়ার ফোর্স ইউ এস মিলিটারিকে জানিয়ে দিয়েছে যে যত মুল্যই দিতে হোক না কেন- পাকিস্তান এবার হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না, তাদের জেট ইসরাইলে বম্বিং করবে এবং মিসাইল ছূঁড়বে। ওদিকে টার্কি’র আর্মি কমান্ডার অ্যামেরিকাকে সাফ সাফ জানিয়ে দেয় যে ইসরাইল আক্রমণের জন্য তাদের এক হাজার Bayraktar Drones রেডি করে রাখা হয়েছে, যে কোন সময় এট্যাক করবে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন পরিস্থিতি অনুধাবন করে প্রধান মন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ফোনে জানাই যে তার ‘অদুরদর্শিতা’ বিশ্বকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে যেখানে ইসরাইলি মিত্রদের যুদ্ধ জেতা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য হয়।

আপাতঃ যুদ্ধ বন্ধ হলেও স্থায়ী সমাধান কি??? সামাধান হতে পারে ইন্টার ফেইথ ডায়লগ। – “সব ধর্মই সঠিক, সব ধর্মই শান্তির কথা বলে”। দু একবার খ্রিষ্টানদের সাথে ইন্টার ফেইথ ডায়লগ হলেও ইহুদি-মুসলিম ডায়লগ কখনো হয়নি কিন্তু এটাই সমাধানের একমাত্র পথ বলে আমি মনে করি। (৩০-০৫-২০২১)
Read More