Sunday, January 24, 2021

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেনো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেনো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো?

==============================
যেরকম নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, খুব সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এমনটি হয়নি। বর্ণ হিন্দু থেকে শুরু করে কিছু কিছু মুসলমানও চাননি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হোক। কলকাতার হিন্দু এলিটরা ছিলো এদিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে। তারা লর্ড হার্ডিঞ্জের কাছে ১৮ বার স্মারকলিপি পাঠায় এই মর্মে যে, ঢাকায় যেনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত না হয়।
.
ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রশ্ন উঠে বঙ্গভঙ্গ রদের কাউন্টার রি-অ্যাকশন হিশেবে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হলে পূর্ববঙ্গের মুসলিমরা বঙ্গভঙ্গের মধ্যে আশার সঞ্চার দেখে। অন্যদিকে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হওয়ায় পশ্চিম বঙ্গের হিন্দু জমিদারশ্রেণী ক্ষেপে যায়। তারা বিভিন্ন সভা-সমিতি করে প্রতিবাদ জানায়। ‘জমিদার’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই সময় ‘রাখী বন্ধন’ উৎসবের ডাক দিয়ে হিন্দু-মুসলিম ভ্রাতৃত্বের আহ্বান করেন।
.
ব্রিটিশ সরকার প্রতিবাদের মুখে বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয় ১৯১১ সালে। এখন আবার মুসলিমরা অসন্তুষ প্রকাশ করে। বঙ্গভঙ্গের ফলে তাদের ঘরে যে আশার প্রদীপ জ্বলেছিলো, বঙ্গভঙ্গ রদের সাথে সাথে তা দপ করে নিভে যায়। বঙ্গভঙ্গ রদের ‘ক্ষতিপূরণ’ হিশেবে পূর্ববঙ্গের মুসলিম নেতৃবৃন্দ ব্রিটিশ সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করে।
.
১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি লর্ড হার্ডিঞ্জের সাথে ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ, নওয়াব সৈয়দ আলী চৌধুরী, এ কে ফজলুল হক দেখা করেন। বঙ্গভঙ্গ রদের প্রতিক্রিয়া হিশেবে তাঁরা ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান । পূর্ববঙ্গের অনগ্রসর মুসলিম জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষার জন্য কেনো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন সেটার স্বপক্ষে তারা যুক্তি দেখান।
.
লর্ড হার্ডিঞ্জ মুসলিম নেতৃবৃন্দের প্রস্তাব মেনে নেন । ব্রিটিশ সরকারের ডিশিসন মেকিং-এর দিকে তাকালে দেখা যায়, মুসলিম-হিন্দু সম্প্রদায় ছিলো তাদের কাছে- জলে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘ! হিন্দু জমিদারদের তোপের মুখে পড়ে তারা বঙ্গভঙ্গ রদ করে, এবার মুসলিমরা তাদেরকে জাপটে ধরলো- আমাদেরকে একটা বিশ্ববিদ্যালয় দিতে হবে। ব্রিটিশ সরকার প্রস্তাবকে সমর্থন করলো। এবার হিন্দুরা এসে বললো- মুসলমানদের জন্য আবার কিসের বিশ্ববিদ্যালয়!?
.
মুসলিম নেতৃবৃন্দের প্রস্তাবের মাত্র ষোলো দিনের মাথায় ১৯১২ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি ডঃ রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটা হিন্দু প্রতিনিধি দল ভাইসরয়ের সাথে দেখা করে। তারা আপত্তি জানায়- কৃষক অধ্যুষিত পূর্ববঙ্গে আবার কিসের বিশ্ববিদ্যালয়? কেউ কেউ ব্যাঙ্গ করে বলে- চাষার দেশে আবার বিশ্ববিদ্যালয়!
.
‘পূর্ববঙ্গে একটা বিশ্ববিদ্যালয় হবে’ এটা শুনার সাথে সাথে কলকাতায় প্রতিবাদ শুরু হয়। এমনকি সেই প্রতিবাদের সুর ঢাকায়ও আসে। ১৯১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ শে মার্চ পর্যন্ত কলকাতা, ঢাকাসহ পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ১১ টি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়- ঢাকায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় হতে দেয়া যাবে না।
.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমদিকের শিক্ষক ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার তার আত্মজীবনী ‘জীবনের স্মৃতিদ্বীপে’ লিখেন-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রশ্ন উঠলে মুসলিমরা খুশি হলেও হিন্দুরা ক্ষেপে যায়। এমনকি কলকাতার যেসব হিন্দুরা কোনোদিন কোনো সভা-সমাবেশে যেতো না, তাদেরকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধীতার প্রশ্নে সভা-সমাবেশে উপস্থিত হতে দেখা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড়ো বিরোধী ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (উপাচার্য) স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। লর্ড হার্ডিঞ্জ তাকে জিজ্ঞেস করেন- কিসের বিনিময়ে আপনি বিরোধীতা বাদ দিবেন? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেন-
.
যদি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো চারটি অধ্যাপক পদ চালু করেন, তবে আমি বিরোধীতা করবো না।
লর্ড হার্ডিঞ্জ সেটা মঞ্জুর করলে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা থেকে সরে আসেন।
.
সৌজন্য -- আরিফুল ইসলাম

No comments:
Write Comments

'; (function() { var dsq = document.createElement('script'); dsq.type = 'text/javascript'; dsq.async = true; dsq.src = '//' + disqus_shortname + '.disqus.com/embed.js'; (document.getElementsByTagName('head')[0] || document.getElementsByTagName('body')[0]).appendChild(dsq); })();